(বাঁ দিক থেকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অন্য এক বিচারপতি প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে সরব হলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার এক মামলার শুনানিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নাম না নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু রাজনৈতিক নেতা আদালতের নামে উল্টোপাল্টা বলেন। তাঁদের শ্রদ্ধা করি না।’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন বিচারপতি। মমতার নাম না নিয়ে বারের সম্পাদক বিশ্বব্রত বসু মল্লিকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিমো এমন কথা বলেন না। তাঁকে দেখেছি, বিচারপতিদের সম্মান করেন। খুবই সহজ সরল মানুষ। দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ। অনেক নেতা-মন্ত্রীও আদালত সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন না।’’
পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজনৈতিক সংঘর্ষে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের ১৪ জন জখম তৃণমূল কর্মীকে এসএসকেএমে দেখতে গিয়েছিলেন অভিষেক। গত শুক্রবার সেখান থেকে বেরোনোর সময় হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই বিচারব্যবস্থার একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘‘বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সমাজবিরোধীদের রক্ষাকবচ দিচ্ছেন।’’ অভিষেক এ-ও বলেন, যদি এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে জেলে যেতে হয়, তা হলে তিনি ১০ হাজার বার জেলে যেতেও রাজি! কিন্তু তিনি সত্য বলবেনই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে রক্ষাকবচ দেওয়ার কারণে এ ভাবেই বিচারপতি মান্থার নাম করে সমালোচনা করেন তিনি। অভিষেকের এই মন্তব্য ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। অভিষেকের সাংসদ পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখেছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। অভিষেকের এই মন্তব্য নিয়ে সোমবার হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তৃণমূল সাংসদের নাম না করে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। এই আবহে এ বার এই নিয়ে মুখ খুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
টেট সংক্রান্ত একটি জরুরি মামলার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে সোমবার তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো হাই কোর্টে যান গৌতম। গৌতমের সঙ্গে কথোপকথন চলার সময়ই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় হাতজোড় করে বলেন, ‘‘আপনারা অধ্যাপক মানুষ। আপনাদের সব সময় শ্রদ্ধা করি। কিছু রাজনৈতিক নেতা আদালতের নামে উল্টোপাল্টা বলেন। তাঁদের শ্রদ্ধা করি না।’’ তার পরই মমতার প্রশংসা করে ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী প্রসঙ্গে বিচারপতির কথা শুনে বার সম্পাদক বলেন, ‘‘তাঁর কাছ থেকে এমন আশা করবেন না। কারণ, তিনি আমাদের জগতের মানুষ। নিয়মিত মেম্বারশিপ রয়েছে।’’
নিয়োগ মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক নির্দেশ নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। হাই কোর্টে নিয়োগ মামলার শুনানি চলাকালীন একাধিক বার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এই আবহে নাম না করে অভিষেকের সমালোচনা এবং মমতার প্রশংসা যে ভাবে করলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, তা এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করল। অতীতেও অবশ্য মমতা প্রসঙ্গে ইতিবাচক মন্তব্যই করতে দেখা গিয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। এক বার বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। আমি কেন খারাপ কথা বলব? আমাকে বলতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’ আবার, নব মহাকরণ হস্তান্তরের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বিচারপতির। সেই সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে তাঁর কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ কথা নিজেই জানিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
(এক নির্বাচিত সাংসদের জনসমক্ষে করা মন্তব্য এই প্রতিবেদনে পুনর্বার তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক এবং সমগ্র বার্তা বিভাগের কর্মীরা এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক এবং কর্তৃপক্ষের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা এবং মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি আস্থা, শ্রদ্ধা অটুট এবং অসীম। সম্মাননীয় পাঠক বা সংশ্লিষ্ট অন্য কেউ এই প্রতিবেদনকে কোনও ভাবেই যেন বিচারব্যবস্থা এবং বিচারপতিদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদন কিংবা সমর্থন হিসেবে বিবেচনা না করেন।)