কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় ধৃত সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে প্রয়োজন রাজ্য সরকারের অনুমোদন। কিন্তু সিবিআইয়ের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত তারা কোনও অনুমোদন পায়নি। শুক্রবার জামিন সংক্রান্ত মামলায় প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী, জানতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নোটিস জারি করল কলকাতা হাই কোর্ট।
শুক্রবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং অশোককুমার সাহার জামিনের মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানিতেই রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সিবিআই। তাদের বক্তব্য, ২০২২ সালে শেষের দিকে সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোককুমার সাহাদের মতো সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে চেয়ে সরকারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি।
সিবিআই আরও জানায়, তদন্ত প্রায় শেষ। নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। যে হেতু সরকারের অনুমোদন মেলেনি, তাই সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী যদি কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হয়, তবে রাজ্যপালের অনুমোদনের প্রয়োজন। আর সরকারি আধিকারিকদের ক্ষেত্রে মুখ্যসচিবের অনুমোদনের দরকার। নিয়োগ মামলায় পার্থদের ক্ষেত্রে সেই অনুমতি মিলেছে। কিন্তু সুবীরেশদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন মেলেনি বলেই দাবি সিবিআইয়ের।
শুক্রবারের শুনানিতে হাই কোর্ট একাধিক বিষয় তুলে ধরেছে। বিচারপতি বাগচী মন্তব্য করেন, ‘‘উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেটা আইনের এবং জনগণের বিশ্বাসের উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আর্থিক দুর্নীতির গুরুত্ব শুধুমাত্র সাজার মেয়াদ থেকে বোঝা যায় না। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, মানুষের আস্থা এবং সমাজের ওপর এর একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে।’’
তার পরই বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘সৎ সরকারি আধিকারিকদের তদন্তের নামে হয়রানি থেকে রক্ষা করার জন্যই অনুমতি গ্রহণের এই নিয়ম বা আইন রয়েছে। কিন্তু যেখানে আদালতের নির্দেশে বা নজরদারিতে তদন্ত হচ্ছে, সেখানে সেই তদন্ত হয়রানির জন্য করা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে সেটা বলা যায় না। অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এতে দেরি হওয়াটা দুঃখের বিষয়।’’
কেন এখনও অনুমতি দেওয়া হল না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি বাগচী। অনুমতি দিতে কত সময় লাগবে, কোন ক্ষেত্রে অনুমোদন দিতে দেরি হচ্ছে— তা সবই আদালতে জানাতে হবে মুখ্যসচিবকে। আগামী ৩ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সেই শুনানিতেই মুখ্যসচিবকে অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়টি জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিবিআই চার্জশিট দিলেও রাজ্য সরকার দুর্নীতি দমন আইনের ধারার ব্যাপারে অনুমতি না দেওয়ায় নিম্ন আদালতে চার্জ গঠন করা যাচ্ছে না বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। যদিও রাজ্যের তরফে যুক্তি ছিল, আদালতের নির্দেশে তদন্ত হওয়ায় রাজ্যের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। অভিযোগ, সে কথা রাজ্যের তরফে কোর্টে লিখিত ভাবে কখনও বলা হয়নি।