আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই বাস রাস্তায় নামবে না। ফাইল ছবি।
নির্ধারিত যাত্রাপথ (রুট) মেনে বাস চলছিল না! অতিরিক্ত লাভের আশায় যাত্রাপথ বদল করার অভিযোগ বাসমালিকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আদালতের নির্দেশও মানা হয়নি। অবশেষে শুক্রবার আদালত অবমাননার দায়ে বাসমালিকের জরিমানা করল কলকাতা হাই কোর্ট। সঙ্গে গ্রেফতারির হুঁশিয়ারিও। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, আদালত অবমাননার কারণে ওই বাসমালিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এমনকি, তাঁর বাস দেখতে পেলেই বাজেয়াপ্ত করবে পুলিশ। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই বাস রাস্তায় নামবে না।
পুরুলিয়ার ঝালদা থেকে সল্টলেকের করুণাময়ী পর্যন্ত একটি বাসের যাত্রাপথ নির্ধারিত ছিল। অভিযোগ, বাসমালিক শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই যাত্রাপথে বাস চালাতেন না। বেশির ভাগ সময় পুরুলিয়া থেকে বাস এনে রাখা হত এসপ্ল্যানেড টার্মিনালে। আবার সেখান থেকে বাস যেত পুরুলিয়ায়। যাত্রাপথ থেকে বাদ যেত করুণাময়ী। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন আর এক বাসমালিক আল্পনা হালদার। তাতেও কাজ না হওয়াতে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর দাবি, যাত্রাপথে এসপ্ল্যানেড টার্মিনাল না থাকা সত্ত্বেও, শিবানাথের বাস সেখান থেকে যাত্রী তোলে। এর ফলে ব্যবসায়িক দিক থেকে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আল্পনার মতে, তাঁর বাস চলে পুরুলিয়ার তুলিন থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত। অর্থাৎ, দীর্ঘ পথ শিবনাথের বাসের প্রায় একই রাস্তায়। যদিও কিছু দাবি অস্বীকার করেন শিবনাথ।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শিবনাথকে সতর্ক করেন। এবং সঠিক পথে বাস চালানোর পরামর্শ দেন। তখন উচ্চ আদালত পুনরায় ওই বাসটি এসপ্ল্যানেড টার্মিনালে দাঁড়ালে এবং যাত্রী তুললে তার ছবি ও ভিডিয়ো তুলে মামলাকারীকে রাজ্য পরিবহণ দফতরের সেক্রেটারিকে পাঠাতে নির্দেশ দেয়। চলতি বছর অগস্ট মাসে আল্পনার আইনজীবী দুর্গাপ্রসাদ দত্ত এবং শৌভিক সেন হাই কোর্টে জানান, বেশ কয়েক দিন আদালতের নির্দেশ মানা হলেও, ফের একই কাজ করে চলেন শিবনাথ। আর সেক্রেটারিও কোনও পদক্ষেপ করেননি। সব শুনে আদালত শিবানথের বাসের রাস্তার অনুমতি (রোড পারমিট) এক বছরের জন্য বাতিল করে দেয়।
অভিযোগ, ওই নির্দেশও না মানার কারণে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্থানীয় থানাকে নির্দেশ দেন, সাত দিনের মধ্যে বাসমালিক শিবনাথকে আদালতে হাজির করাতে হবে। বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা দেন শিবনাথ। কেন আদালতের নির্দেশ তিনি মানেননি তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি। আদালত প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড করে শিবনাথকে। তিনি আদালতের কাছে ওই টাকার অঙ্ক কমানোর প্রার্থনা করেন।
অবশেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বাসমালিক শিবনাথকে ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড করেন। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে ওই টাকা জমা করতে হবে। একই সঙ্গে আদালত পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এবং বিধাননগর কমিশনারটকে নির্দেশ দেয়, পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত ওই বাসটি তারা বাজেয়াপ্ত করে হেফাজতে রাখবে। বিচারপতি জানান, এর পরেও আদালতের নির্দেশ না মানলে শিবানথের জেলযাত্রা অনিবার্য। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় এই মামলার পরবর্তী শুনানি।