রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার মেয়াদ আর বৃদ্ধি করল না কলকাতা হাই কোর্ট। শান্তি বজায় রাখতে রাজ্য সরকারকে সদর্থক পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, রাজ্য শান্তি বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি, ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চেয়েছে আদালত। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে সে বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজ্যকে।
ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে রাজ্যে ১৯ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখতে বলেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। পরে হাই কোর্ট সেই মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল ২১ জুন পর্যন্ত। তার পরে আরও এক বার বাহিনী রাজ্যে রাখার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। হাই কোর্ট জানায়, ২৬ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার। ওই মামলায় আদালত আর নতুন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার মেয়াদ বৃদ্ধি করছে না। বুধবার বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, শান্তি বজায় রাখতে রাজ্যকে সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে। তারা তা করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেন্দ্র।
এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কত দিন থাকবে, সে বিষয়ে দায়িত্ব পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া হয়েছে। কোথায় কত বাহিনী থাকবে, সে সিদ্ধান্তও নেবে কেন্দ্র। আদালতের পর্যবেক্ষণ আমরা যেটুকু শুনলাম, তাতে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই দায়িত্ব কেন্দ্রকে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে, না কমানো হবে, তারা কত দিন রাজ্যে থাকবে, কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।’’
বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঠিকানা বিভিন্ন স্কুল। কিন্তু স্কুলে বাহিনী রাখায় পঠনপাঠনে সমস্যা নিয়ে পৃথক একটি মামলা হয়েছে আদালতে। সে প্রসঙ্গে শুভেন্দুর আইনজীবী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় থাকবে, তার ব্যবস্থা করা রাজ্যের দায়িত্ব। স্কুল বাদ দিয়ে অন্য আরও অনেক জায়গা আছে বাহিনী রাখার। বিশেষ রাজনৈতিক দল যখন সমাবেশ করে, দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে যেখানে থাকেন এবং সারা দিন ধরে রান্নাবান্না করেন, সেখানেও বাহিনীকে রাখা যায়। ভোট-হিংসায় ১৮২১ জন ঘরছাড়ার হিসাব আদালতে আমরা দিয়েছি। তার প্রেক্ষিতে আদালত রাজ্যকে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছে।’’
উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে ইমেলে অভিযোগ নিতে বলেছিল আদালত। সেই সংক্রান্ত রিপোর্টে দেখা যায়, গড়ে প্রতি দিন ১০টি করে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ দায়ের হচ্ছে রাজ্যে। যা নিয়ে বিচারপতিরা কড়া মন্তব্য করেছিলেন। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে বলেছিল আদালত। তার পর বুধবার তারা জানিয়ে দিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেন্দ্র।