কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
ববিতা সরকারের করা মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রাখল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। স্কুল সার্ভিস কমিশনকে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র প্রকাশ করতে হবে।
বুধবার বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তরপত্র প্রকাশে কোনও অসুবিধা নেই। তবে, উত্তরপত্র প্রকাশ করলেও তার উপর ভিত্তি করে কারও চাকরি এখনই বাতিল করা যাবে না বলেও জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সেই মামলার অগ্রগতির দিকে লক্ষ্য রেখেই এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারবে সিঙ্গেল বেঞ্চ।
গত ৭ জুলাই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ৫,৫০০ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা-সহ ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্র প্রকাশ করতে হবে কমিশনকে। উত্তরপত্রের পাশাপাশি নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, স্কুলের নাম-সহ ৯০৭ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে, যাঁদের বিকৃত উত্তরপত্র উদ্ধার করেছিল সিবিআই।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ২০১৬ সালে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষার বিস্তারিত মেধাতালিকার প্রকাশের আবেদন করে মামলা করেন ওই বিচারপতিরই নির্দেশে চাকরি হারানো ববিতা। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৫,৫০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ৯০৭টি বিকৃত উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) উদ্ধার করে সিবিআই। তার মধ্যে ১৩৮ জন ছিলেন প্রতীক্ষিত তালিকায় (ওয়েটিং লিস্টে)।
ববিতার আবেদন, একাদশ-দ্বাদশের বিস্তারিত তথ্য-সহ প্যানেল প্রকাশ পেলে কারা, কী ভাবে, কোথায় চাকরি পেয়েছেন তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম ২০ জনের মধ্যে দুর্নীতির কারণে কেউ চাকরি পেয়ে থাকেন, তবে তাঁর আবার শিক্ষিকা হওয়ার সুযোগ আসবে। তাই প্যানেল প্রকাশ করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ২০১৬ সালে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ৫,৫০০ জনের উত্তরপত্র প্রকাশের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল কমিশন।
এক সময় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর বিরুদ্ধে নিয়ম-বহির্ভূত পদ্ধতিতে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হন ববিতা। মামলা শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্কুলশিক্ষিকার পদ হারিয়েছিলেন অঙ্কিতা। সেই চাকরি ববিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এর পর ববিতারও চাকরি বাতিলের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা অনামিকা। তাঁর অভিযোগ ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতার স্নাতকস্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ বার চাকরি হারান ববিতা। সেই চাকরি অনামিকাকে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অঙ্কিতার থেকে যে টাকা ববিতা পেয়েছিলেন, তা-ও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন ববিতা। সেই মামলা এখনও ডিভিশন বেঞ্চেই বিচারাধীন। তার মাঝেই মেধাতালিকা এবং উত্তরপত্র দেখতে চেয়ে নতুন মামলা করেন ববিতা। সেই মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রাখা হল ডিভিশন বেঞ্চেও। শীঘ্রই উত্তরপত্র প্রকাশ করতে হবে কমিশনকে।