—প্রতীকী চিত্র।
অভিযুক্ত জেলবন্দি। রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সংশোধনাগারে। নিম্ন আদালতে জামিনের আর্জি জানানোর পর তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এর পর তিনি আর কোনও জামিনের আর্জি জানাননি। তবে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা উঠে গিয়েছিল তাঁর জামিনের জন্য! ওকালতনামায় তা হলে কে সই করলেন? উত্তর এখনও অধরা। জামিনের এই মামলায় অবাক হয়েছে উচ্চ আদালতও। অভিযুক্তের অজান্তেই কী ভাবে তাঁর জামিনের জন্য মামলা দায়ের হল? সিআইডিকে তা তদন্ত করে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। পুজোর পরে আদালত খুললে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে সিআইডিকে।
মামলার হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “এই মামলায় অনেক রহস্য তৈরি রয়েছে। মামলাটি হাসির পর্যায়ে চলে গিয়েছে।” আদালতের প্রশ্ন, হাই কোর্টে জামিনের আবেদন কে করলেন? মামলার প্রতিলিপিতে কে স্বাক্ষর করলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সিআইডিকে তদন্তভার দিয়েছে হাই কোর্ট। যে হেতু ‘মামলাকারী’ ওই জামিনের আবেদনই করেননি, তাই জামিন মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
গত বছরের নভেম্বরে এক মহিলা তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, খুনের চেষ্টা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক থানায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত চালাচ্ছিল পুলিশ। গত ১২ অগস্ট অভিযুক্ত শ্বশুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬ অগস্ট পশ্চিম মেদিনীপুরে অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারকের এজলাসে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। তবে তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এর পরে ৩০ অগস্ট জামিনের আর্জি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার শুনানি চলাকালীনই এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
জামিনের মামলায় জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিযুক্তের লিখিত বক্তব্য জানতে চেয়েছিল আদালত। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই মামলায় রিপোর্ট জমা দেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তখনই জানা যায়, অভিযুক্ত জামিনের জন্য হাই কোর্টে কোনও আবেদনই জানাননি। এমনকি তাঁর জামিনের জন্য যে মামলা হয়েছে হাই কোর্টে, সেই কথাও তিনি জানেন না। তা হলে ওকালতনামায় কে সই করল? জামিনের পক্ষে হলফনামা দিলেন কে? এমন বেশ কিছু প্রশ্ন ভাবিয়ে তোলে আদালতকে। যিনি জামিনের পক্ষে হলফনামা দিয়েছেন, তাঁকেও ২৩ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়েছিল আদালতে। তাঁর সঙ্গে অভিযুক্তের কী সম্পর্ক, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে আদালতের নির্দেশে ২৩ সেপ্টেম্বর হাজিরা দেন হলফনামা জমা দেওয়া ওই ব্যক্তি। যদিও কেন মামলাকারীর অনুমতি ছাড়া তিনি জামিনের জন্য হলফনামা দাখিল করলেন, সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।