স্কুলের বকেয়া ফি মেটানোর নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র।
বেসরকারি স্কুলের বকেয়া ফি মেটানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাকি থাকা ফি আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে অভিভাবকদের মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের ১১২টি বেসরকারি স্কুলকে পরবর্তী শুনানির আগে হলফনামা পেশ করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
বিনীত রুইয়া নামে এক অভিভাবক, লকডাউন এবং কোভিডের জন্য উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বেসরকারি স্কুলগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে কেবল টিউশন ফি নিক বলে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। আবেদনে বিনীত জানান, স্কুলগুলি টিউশন ফি ছাড়াও অন্য বিভিন্ন খাতে পড়ুয়াদের কাছ থেকে বিপুল টাকা নেয়। সেই বাড়তি টাকা নেওয়া বন্ধ করুক বেসরকারি স্কুলগুলি— আবেদনে এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। অভিভাবকদের ফোরামের পক্ষ থেকে দায়ের করা এই জনস্বার্থ মামলাটি মূলত করা হয়েছিল কল্যাণ ভারতী ট্রাস্ট (যারা হেরিটেজ স্কুল চালায়), অশোকা হল স্কুল গোষ্ঠী, অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং বিড়লা স্কুলের বিরুদ্ধে।
মামলাটির গুরুত্ব বিচার করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জরুরি ভিত্তিতে ওই মামলার শুনানির নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে আইনজাবীদের পাশাপাশি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলও এই শুনানিতে অংশ নেন। আইনজীবীরা প্রথমে দাবি করেন, স্কুলগুলো যে হেতু বেসরকারি, তাই এই মামলার কোনও যৌক্তিকতা নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাকে গুজরাত চালাবে না, একুশের ভার্চুয়াল সভা থেকে হুঙ্কার মমতার
কিন্তু দুই বিচারপতি মামলার যৌক্তিকতা আছে বলে জানান। প্রায় ৯০ মিনিট ধরে সব পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যাঁরা এখনও স্কুলের বকেয়া ফি মেটাননি, সেই অভিভাবকদের আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে স্কুলগুলোকে তিনি নির্দেশ দেন, অগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের সোমবারে পরবর্তী শুনানির আগে হলফনামা পেশ করতে হবে। সেই হলফনামায় জানাতে হবে, লকডাউন এবং কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে স্কুলগুলি কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করেছে কি না। স্কুলের কর্মীদের পুরো বেতন দেওয়া হয়েছে কি না। স্কুলগুলো ফি কমিয়েছে কি না তা-ও ওই হলফনামায় জানাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে স্কুলের ফি সংক্রান্ত বিষয়ে তারা কী কী নির্দেশ বা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পক্ষে এ দিনের শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন অয়ন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি হয়। আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে বকেয়া মেটাতে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে। পুরোটা না পারলে অন্তত ৮০ শতাংশ বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।”
মামলাকারী বিনীত রুইয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছে। আমাদের মূল বক্তব্য ছিল, স্কুলগুলো এই পরিস্থিতিতেও শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করছে। আদালত আমাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শুনেছে। আমরা পরবর্তী শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি।”