ভাটপাড়া পুরসভায় তৃণমূল সমর্থকদের উল্লাস। রয়েছেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
১৯ জন কাউন্সিলরকে এনে পুরপ্রধানকে অপসারণের ভোটাভুটি করে ফেলেছিল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাটপাড়ায় পুরসভা দখলের উৎসবও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বৈঠকের বৈধতাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিল বিজেপি। বিকেলে হাইকোর্ট ওই বৈঠককে বাতিল করে দিয়েছে। ফলে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া পুর বোর্ডের ভাগ্য আপাতত আদালতেই ঝুলে রইল।
পুরপ্রধানকে অপসারণের জন্য যে-চিঠি তৃণমূল দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে ২০ জানুয়ারি তলবি সভা ডেকেছেন পুরপ্রধান সৌরভ সিংহ। হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম সিংহ এ দিন জানিয়েছেন, অনাস্থার ভোটাভুটি সেই দিনেই করতে হবে।
হাইকোর্টের রায়ে উল্লসিত বিজেপি। যদিও তাঁদের হাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছে বিজেপি। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ জানান, হাইকোর্টে তাঁদেরই জয় হল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, আজ, আজ, শুক্রবারেই তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন।
আরও পড়ুন: টালা সেতুতে টাস্ক ফোর্সের হাতেই সমন্বয়
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে হাতছাড়া হওয়া পাঁচটি পুরসভার মধ্যে চারটি আগেই পুনর্দখল করে তৃণমূল। তাই ভাটপাড়া পুরসভা দখল করা তাদের কাছে ছিল ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। ভাটপাড়ার একদা তৃণমূল বিধায়ক এবং বর্তমানে বিজেপির ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের গড়। অর্জুনের ভাইপো সৌরভই পুরপ্রধান ছিলেন। ৩৫ আসনের পুরসভায় এ দিন ১৯-০ ভোটে সৌরভকে অপসারণের দাবি করে তৃণমূল। যদিও এখন কাউন্সিলরের সংখ্যা ৩২। এ দিন বৈঠকে আসেননি বিজেপির কাউন্সিলরেরা।
ডিসেম্বরের ৬ তারিখ পুরপ্রধান সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তৃণমূল। নিয়ম অনুযায়ী, চিঠি জমা পড়ার ১৫ দিনের মধ্যে তলবি সভা ডাকার কথা। ১৫ দিনের মাথায় তলবি সভা ডাকেন পুরপ্রধান। কিন্তু বৈঠকের দিন ধার্য করেন ৩১ দিন পরে। সেই চিঠিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে তিন কাউন্সিলরকে দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর পাল্টা তলবি সভা ডেকেছিলেন তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর।
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলার ট্যাবলো ‘বাতিলে’ ক্ষুব্ধ রাজ্য, নগ্ন প্রতিহিংসা, বললেন সুব্রত
অনাস্থার চিঠিতে তৃণমূলের ১৮ জন কাউন্সিলর সই করেছিলেন। কিন্তু এ দিন পুরপ্রধানের অপসারণের পক্ষে ভোট দেন উপ-পুরপ্রধান সোমনাথ তালুকদারও। আগের তৃণমূলের বোর্ডে তিনিই উপ-পুরপ্রধান ছিলেন। পরে বিজেপির বোর্ডেও তিনি ওই পদেই থাকেন।
এ দিন ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আঁটোসাটো। পুরকর্মীদেরও পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। মিনিট কুড়ির মধ্যেই ভোটাভুটি শেষ হয়ে যায়। বৈঠক শেষে উপ-পুরপ্রধান জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, এ দিন সকাল ১১টার পর থেকে সৌরভ সিংহ আর ভাটপাড়ার পুরপ্রধান থাকলেন না।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আদালতে গিয়ে সময় কিনে কোনও লাভ হবে না। আদালত তো এটা বলেনি যে, ওই ১৯ জন বিজেপির কাউন্সিলর। সংখ্যার জোর থাকলে আদালতে না গিয়ে ওঁরা ভোটাভুটিতেই আসতেন।’’