—ফাইল চিত্র।
স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল পঠনপাঠনে সংরক্ষণের প্রশ্নে কলকাতা হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার।
কর্মরত চিকিৎসকদের এমডি-এমএসে ভর্তির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা মঙ্গলবার বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। তাদের রায়, কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য এমডি-এমএসে ৪০% আসন সংরক্ষণ অসাংবিধানিক। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৪০% আসনে ২৮৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই সব ভর্তিই বাতিল। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, পুজোর ছুটি শেষ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ওই সব আসনে নতুন করে ভর্তির কাউন্সেলিং শুরু করতে হবে এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে তার পরের ১০ দিনের মধ্যে।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতর জানায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমডি-এমএসে কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের ভর্তির জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের নীতি নেওয়া হয়। সেই নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এপ্রিলে হাইকোর্টে মামলা করেন মহম্মদ নাজির হোসেন-সহ কয়েক জন চিকিৎসক। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
মামলাকারীদের অন্যতম কৌঁসুলি ফিরদৌস শামিম জানান, আবেদনে বলা হয়, রাজ্যের সংরক্ষণ নীতি এমসিআই বা মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার নির্দেশিকার বিরোধী। এমসিআইয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও চিকিৎসক রাজ্যের প্রত্যন্ত বা দুর্গম এলাকার কোনও সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করলে তাঁকে চাকরির বছর-পিছু বাড়তি ১০ নম্বর দিতে হবে। সেই বাড়তি নম্বর যুক্ত হবে এমডি-এমএসের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে। তার ভিত্তিতেই মেধা-তালিকা তৈরি হবে। কিন্তু রাজ্য সরকারের সংরক্ষণ নীতিতে শুধু কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের জন্য পৃথক কোটা থাকছে, যা এমসিআইয়ের নির্দেশিকার পরিপন্থী।
এমসিআইয়ের আইনজীবী সুনীত রায় জানান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য রাজ্য ভর্তির দু’টি পৃথক তালিকা প্রকাশ করে। এমডি-এমএসের সর্বভারতীয় প্রবেশিকায় উত্তীর্ণদের জন্য ৬০% আসন রেখে তৈরি হয় একটি তালিকা। আর কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের জন্য (তাঁদেরও সর্বভারতীয় প্রবেশিকা দিতে হয়েছে) ৪০% আসন সংরক্ষণ করে অন্য তালিকাটি তৈরি করা হয়। রাজ্যের সেই সংরক্ষণ কোটাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলায় বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় গত অগস্টে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, এমডি-এমএসে ভর্তির জন্য সম্মিলিত মেধা-তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল মামলা করা হয়েছিল বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে।
সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হবে। রাজ্য সরকার হয় শীর্ষ আদালতে আবেদন করুক অথবা আসন সংরক্ষণে অর্ডিন্যান্স জারি করুক।’’ অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘এর দায় স্বাস্থ্য ভবনকেই নিতে হবে। চার বছর ধরে সার্ভিস কোটা নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে জটিলতা তৈরি করা হচ্ছিল।’’
হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজেন পাণ্ডে জানিয়ে দেন, রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাওয়ার আগে কিছু বলার নেই।