(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসতে চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিষয়টি নিয়ে আদালতেও গিয়েছিলেন তিনি। শুভেন্দু যেখানে ধর্নায় বসার আর্জি জানিয়েছিলেন, গত অক্টোবর মাসে সেখানেই ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আদালত শুভেন্দুর আইনজীবীকে প্রশ্ন করে, কেন বিরোধী দলনেতাকে ওই জায়গায় ধর্নায় বসতে হবে? অন্যত্র কেন নয়? শাসকদলের নেতা বসেছিলেন বলে তাঁকেও একই জায়গায় বসতে হবে এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না বলেই জানিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে শাসকদলের নেতার ক্ষেত্রে পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছিল তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২১ জুন। ওই দিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি)-কে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসতে চেয়ে কলকাতা পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এর পরেই তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলল, গত অক্টোবরে অভিষেকের ধর্নায় বসা নিয়ে। ওই ধর্নায় পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছিল, তা জানতে চেয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। যদিও অভিষেকের নাম উচ্চারণ করা হয়নি আদালতে।
বিচারপতি জানিয়েছেন, শাসকদলের এক নেতা গত অক্টোবরে রাজভবনের সামনে টানা পাঁচ দিন ধর্না দিয়েছিলেন। সেই সময়েও ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছিল। পুলিশ তখন কী পদক্ষেপ করেছিল, জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। ঘটনাচক্রে, গত বছরের ৫ থেকে ১০ অক্টোবর অভিষেক ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন। আদালতে তাঁর কথাই বলা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’র ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসতে চেয়েছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’য় বিজেপির অনেক কর্মী আক্রান্ত, ঘরছাড়া। বিষয়টি রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের অধিকারীর নজরে আনতে চায় তারা। সেই কারণে রাজভবনের সামনে প্রতীকী অবস্থানে বসার আবেদন করা হয়েছে। কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে বলেও জানিয়েছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন, ধর্নার অনুমতি চেয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। ১৯ জুন বিকেলের পর থেকে ধর্নায় বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘অব্যক্ত প্রশাসনিক কারণে’ পুলিশের তরফে তাঁকে জায়গা পরিবর্তন করে ধর্নার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা তিনি মানতে নারাজ।
বুধবার হাই কোর্ট এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর আইনজীবীকে বলে, রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। শাসকদলের নেতা সেখানে কর্মসূচি করেছেন বলে তাঁরাও করবেন, এটা যুক্তি হতে পারে না। পরিবর্তে ধর্নার জন্য অন্য জায়গা নির্বাচন করতে বলা হয়েছে বিজেপিকে। আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২১ জুন। সে দিন রাজভবন ছাড়া কর্মসূচির বিকল্প জায়গার নাম আদালতকে জানাতে হবে শুভেন্দুদের। তাঁর আইনজীবী আদালতের কাছে অন্তত এক ঘণ্টার কর্মসূচির জন্য সওয়াল করেন। কিন্তু সে বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশ দেয়নি উচ্চ আদালত। আদালতে শুভেন্দুর পক্ষে সওয়াল করেছেন আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সকলকে সমান চোখে না দেখলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এটি দু’জন ব্যক্তির মধ্যেকার গোলমাল নয়, এটি দু’টি পৃথক রাজনৈতিক দলের বিবাদ। তাই জনমানসে এর প্রভাব পড়বে।
শাসকদলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিচারপতি রাজ্যের এজিকে প্রশ্ন করেন, কেন ওই নেতার কর্মসূচিতে অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ? এজি জানান, এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর জানা নেই। জেনে আসতে হবে। রাজ্যের তরফে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়, কোনও এক জনকে ভুল করে বা অন্যায় ভাবে অনুমতি দেওয়া হলে বাকিরাও সেই কাজের অধিকার পেয়ে যায় না। আদালতের নির্দেশ, অক্টোবরে শাসকদলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছিল, তা রাজ্যকে জানাতে হবে।