রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহকে কয়েকটি বিষয় জানানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে হিংসা, রক্তপাতের অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। বিজেপি-সহ রাজ্যের অন্য বিরোধীরা এমনও বলেছেন যে, নিরাপত্তার অভাববোধ করায় মনোনয়ন জমা দিতেও পারেননি বহু প্রার্থী। এ দিকে, এর মধ্যেই জানা গিয়েছে, শাসক দল তৃণমূলের এক প্রার্থী দেশের বাইরে থেকেও নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে, এটা কী ভাবে সম্ভব হল? হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ কমিশনকে প্রশ্ন করেছেন, সশরীরে উপস্থিত না থেকেও কি মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়? যদি তা-ই হবে, তা হলে এত প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মার খেলেন কেন? আর ওই প্রার্থীই বা বিদেশে থেকে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করলেন কী ভাবে?
বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সিংহের বেঞ্চে। এর মধ্যে একটি মামলা ছিল বিদেশে থেকেও পঞ্চায়েতের প্রার্থিপদে মনোনয়ন জমা দেওয়া সংক্রান্ত। মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী মহিরুদ্দিন গাজি বিদেশে গিয়েছেন গত ৪ জুন। তিনি হজযাত্রা করতে গিয়েছেন বিদেশে। ভারত সরকারের হজ কমিটির তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। কবে গিয়েছেন, কবে ফিরবেন— সব সেখানে লেখা রয়েছে। অথচ তিনি বিদেশে থাকা সত্ত্বেও তাঁর মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। মামলাকারীর যুক্তি, কী ভাবে এই মনোনয়নপত্র গৃহীত হল? এটা সম্পূর্ণ বেআইনি, কারণ, মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুযায়ী, মনোনয়ন জমা দিতে প্রার্থীর স্বাক্ষর প্রয়োজন। মামলাকারীর এই যুক্তি শুনে বিচারপতি সিংহ মন্তব্য করেছেন, ‘‘পরিস্থিতিটা এক বার দেখুন। এক দল মনোনয়ন দিতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে, মার খাচ্ছে। আর এক দল বিদেশে বসে মনোনয়ন দিচ্ছে।’’
মহিরুদ্দিনের আইনজীবী অবশ্য এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে আদালতকে বলেছিলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী সশরীরে না গেলেও মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়। প্রার্থীর নির্বাচনী প্রস্তাবক গেলেও মনোনয়ন জমা দেওয়া হতে পারে।’’ কিন্তু বিচারপতি সিংহ পাল্টা জানতে চান, ‘‘সে ক্ষেত্রে তো মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর স্বাক্ষর থাকা প্রয়োজন। তা হলে তিনি স্বাক্ষর করলেন কী ভাবে?’’ বস্তুত, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়েছে ৮ জুন। মহিরুদ্দিন হজযাত্রার জন্য বিদেশে গিয়েছেন তারও চার দিন আগে। ফলে আগে থেকে মনোনয়নপত্রে সই করে যাওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার আদালতকে মামলাকারীরা জানিয়েছেন, এই অনিয়মের পরও মহিরুদ্দিন সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার ফর্মে জানিয়েছেন, প্রার্থী সঠিক পদ্ধতিতে মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা কী করে সম্ভব হল? কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সিংহ এ ব্যাপারে কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন, কমিশনকে জানাতে হবে মনোনয়ন দেওয়ার সময় প্রার্থীদের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন কি না? স্বাক্ষর কী ভাবে করা হয়, তা-ও জানাতে হবে। এই মামলায় স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে অভিবাসন ব্যুরোকেও যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। শুক্রবার মামলাটির পরবর্তী শুনানি।
অভিবাসন ব্যুরোকে এই মামলায় যুক্ত করার প্রসঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে অভিবাসন ব্যুরোর কাছে ভোটের নিয়ম সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া যেতে পারে। সে জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মামলায় যুক্ত করতে বলা হয়েছে।