ছবি: সংগৃহীত।
আরও একটি বিধানসভার বাজেট অধিবেশন পেরিয়ে গেল। কিন্তু কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (সিএজি) অডিট রিপোর্ট পেশ করেনি রাজ্যের অর্থ দফতর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিভিন্ন কাজ নিয়ে ছ’টি রিপোর্ট তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে সিএজি। এক বছরের বেশি সেগুলো সরকারের ঘরে পড়ে আছে। নবান্ন সেগুলো বিধানসভায় পেশ করার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী সরকার বিধানসভায় তা পেশ না-করায় সিএজি-ও সেই সব রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারছে না বলে নিরীক্ষণ সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।
নবান্নের খবর, সিএজি ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের ছ’টি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ২০১৮-এর মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সেগুলো নবান্নে পাঠানো হয়। সাধারণত সিএজি অডিট রিপোর্ট পাঠানোর পরে তা পেশ করা হয় বিধানসভার অধিবেশনে। সিএজি এ-পর্যন্ত সারা দেশে ১২৩টি রিপোর্ট পেশ করেছে। তার মধ্যে ১১টি রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি বিধানসভায় পেশ করেনি। পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি, জম্মু ও কাশ্মীরে তিনটি এবং নাগাল্যান্ডে দু’টি রিপোর্ট পেশ করা হয়নি। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা এমন কোনও বড় ব্যাপার নয়। ২০১৬-১৭ সালের আগের সমস্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এগুলিও সময়মতো পেশ করা হবে।’’
যদিও নিরীক্ষণ সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের অডিট রিপোর্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করতে ২০১৮ গড়িয়ে গিয়েছে। সরকার তার পরেও এক বছর অডিট রিপোর্টগুলো ফেলে রেখেছে। অডিট রিপোর্ট ফেলে না-রেখে দ্রুত প্রকাশ্যে আনলে সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলার বিষয়টি সামনে আসে। অডিট রিপোর্ট এলে তা বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সামনে আনা হয়। সেখান থেকে নানান ব্যবস্থাগ্রহণের সুপারিশ করা হতে পারে। যদি বড়সড় দুর্নীতি ধরা পড়ে, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে সে-সব কিছুই হচ্ছে না।
সিএজি এখন ২০১৭-১৮ সালের অডিটের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। কিন্তু তার আগের রিপোর্টগুলোই দিনের আলো দেখেনি!
শুধু অডিট রিপোর্ট নয়, ২০১১-১২ সালে ক্ষমতার আসার পরে প্রথম অর্থবর্ষের আয়-ব্যয়ের হিসেবও প্রায় তিন বছর বিধানসভায় পেশ করেনি সরকার। পরে সিএজি কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তা প্রকাশ করে নবান্ন। পশ্চিমবঙ্গের অডিট রিপোর্ট পেশের রেকর্ডও তেমন উজ্জ্বল নয়। সিএজি জানাচ্ছে, বরাবরই রিপোর্ট জমা পড়ার পরেও দীর্ঘদিন তা আটকে রাখে নবান্ন। ২০১৫-১৬ সালের রিপোর্ট প্রকাশের পরে আবার চুপ করে গিয়েছে সরকার। ২০১৬-১৭ সালের রিপোর্টগুলো এ বার অন্তত বিধানসভার অধিবেশনে পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।