ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতা বন্দর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে চিহ্নিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই জানুয়ারিতে কলকাতায় গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিল। মোদী সরকারের যুক্তি, বাংলার মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তারা কী অ্যামেন্ড করেছে, সেটা আমাদের কাছে আসেনি এখনও। আগে আসুক, দেখি। তার আগে মন্তব্য করতে চাই না।’’ তবে তাঁর মত, কলকাতা বন্দরের নাম পরিবর্তন না হলেই ভাল হত।
এ দিনের সিদ্ধান্তের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলার মানুষের আবেগের কথা মনে রেখে ১২ জানুয়ারি কলকাতা বন্দরের ১৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা হয়। তার পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠকে ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাব পাশ হয়। কেন্দ্রের যুক্তি, সাধারণ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের নামকরণ সংশ্লিষ্ট শহরের নামে হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে আগেও জাতীয় নেতাদের নামে অনেক বন্দর বা বিমানবন্দরের নামকরণ হয়েছে। যেমন, মুম্বই বন্দরের নাম জওহরলাল নেহরুর নামে, তুতিকোরিন বন্দরের নাম ভি ও চিদম্বরানারের নামে, এন্নোরের নাম কামরাজ ও কান্ডলা বন্দরের নাম দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে নামাঙ্কিত হয়েছে।
কলকাতা বন্দরের অধীনে নেতাজি সুভাষ ডক আছে অনেক দিন থেকেই। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গোটা বন্দরের নামই এখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর। বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ‘আদর্শগত গুরু’, হিন্দু মহাসভার নেতা, ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদের নামে এই নামকরণ নিয়ে রাজ্যের অন্য রাজনৈতিক দলগুলি আগেই আপত্তি তুলেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারকে এ নিয়ে আক্রমণ করেছিল বাম ও কংগ্রেস। পরে সেই সুর শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের গলাতেও। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘’বিজেপি সরকার যেখানে যেমন খুশি নাম বদলাচ্ছে। নেতাজি সুভাষের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হল শ্যামাপ্রসাদের নাম! প্রথম জন বিপ্লবী, দ্বিতীয় জন ঔপনিবেশিক শাসকের সহায়ক, বাংলা ভাগের উদগাতা। এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না!’’ আর ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় বলেছেন, ‘‘কলকাতা বন্দরের নাম সুভাষচন্দ্র বসুর থেকে পাল্টে শ্যামাপ্রসাদের নাম রাখা হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। তবে সুভাষ ও শ্যামাপ্রসাদের রাজনীতির মতাদর্শ স্পষ্ট আলাদা ছিল। আর কলকাতা পোর্টের নাম যাঁর নামেই রাখা হোক, তার মধ্যে রাজনীতি নিহিত।’’
আরও পড়ুন: খুলছে পাঁচ সরকারি পর্যটন নিবাস
আরও পড়ুন: পরিযায়ীকে দশ হাজার করে টাকা দিক কেন্দ্র: মমতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতীয় যুবকদের অন্তর্ভুক্তিতে সাহায্য করা বা মুসলিম লিগের সঙ্গে বাংলায় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রসঙ্গ তুলে শ্যামাপ্রসাদের নামে বন্দরের নামকরণের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ পশ্চিমবঙ্গের জনক। স্বাধীন ভারতের প্রথম রাজনৈতিক শহিদ। এ দেশের অখণ্ডতা ও সংহতির জন্য প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন। কলকাতা বন্দরের নাম শ্যামাপ্রসাদের নামে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অজস্র ধন্যবাদ।’’