মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধর্মতলায়। ছবি: এএফপি।
মোদী বিরোধিতায় গর্জে উঠল কলকাতা। ছাত্র-যুব থেকে অশীতিপর বৃদ্ধা— মোদী গো ব্যাক প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে শহর জুড়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন তাঁরা। রাজনৈতিক পরিচয় নয়, স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মিছিল এসে কলকাতার ফুসফুস ধর্মতলায় গর্জে উঠল। কালো বেলুনে ছেয়ে গেল ধর্মতলার আকাশ। এক দিকে যখন মোদী কলকাতায় এসে রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন, তখন এনআরসি, সিএএ, এনআরপি থেকে আজাদি চাইছে কলকাতা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ধর্মতলা চত্বরে। কেউ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন পথনাটিকার মাধ্যমে, কেউ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিরোধিতার স্লোগান তুলে।
কোনও প্রধানমন্ত্রীর সফরে সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা জুড়ে এমন বিক্ষোভের নজির নেই। মোদীর এই সফরকে ঘিরে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, দেশ জুড়ে টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে #দীপিকাপিআরব্যাকফায়ারস-এর পর দ্বিতীয় স্থানে উঠে #গোব্যাকমোদীফ্রমবেঙ্গল। গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভের আগাম প্রস্তুতি ছিল প্রকাশ্যেই। ফলে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শুক্রবারই বাতিল করে দিয়েছিল এসপিজি। বিকেল চারটের কিছু আগে মোদীর বিমান নামে কলকাতা বিমানবন্দরে। মোদীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতা মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিংহ এবং রাহুল সিংহ।
বিমানবন্দরের বাইরে তখন বিক্ষোভের ঢল। জাতীয় পতাকা, কালো বেলুন, কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বাম-কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। ‘মোদী গো ব্যাক’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ওই চত্বর। বিক্ষোভ চলে যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট, গোলপার্ক, ধর্মতলা, হাতিবাগান, রাজারহাট-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই বিক্ষোভের আবহেই বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রেস কোর্সে পৌঁছন মোদী। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সে কারণে রেস কোর্সেও ছিল কড়া নিরাপত্তা। মোদী সেখানে আসার আগে থেকেই রেস কোর্সের অদূরেই জমায়েত হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। মোদীর কপ্টার রেস কোর্সে নামতেই তাঁর উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। কালো পাতাকা দেখান বিক্ষোভকারীরা। তারা এগোতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সামান্য ধস্তাধস্তি হয়। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ভিআইপি রোড। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভে উত্তাল শহরে মোদীর সঙ্গে বৈঠক, বকেয়া চেয়েছি, বললেন মমতা
আরও পড়ুন: মমতা বলেছেন ‘না’, তবুও রাজ্যে এনপিআরের কাজ চলছেই!
রেস কোর্স থেকে মোদীর কনভয় রাজভবনের উদ্দেশে রওনা হয়। রেস কোর্স থেকে রাজভবন যাওয়ার রাস্তা অনেক আগে থেকেই সম্পূর্ণ ফাঁকা করে দিয়েছিল পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা যাতে কোনও ভাবেই মোদীর কনভয় পথের কাছাকাছি পৌঁছতে না পারেন, তার জন্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল। পুলিশের সতর্ক নজর ছিল, ফাঁক গলে কেউ যাতে প্রধানমন্ত্রীর পথে চলে না আসতে পারেন। নন্দন চত্বর থেকে পড়ুয়ারা রাজভবনের দিকে মিছিল করে এগোতে চাইলে পুলিশ তাদের অনেক আগেই আটকে দেয়। রেসকোর্স থেকে মোদীর কনভয় রাজভবনে পৌঁছয়। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই হাজির ছিলেন মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের দু’জনের মধ্যে কিছু ক্ষণ বৈঠক হয়। রাজভবন থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো।” মমতা আরও বলেন, “ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ২৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। বুলবুলের সাত হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসির বিরুদ্ধে আমরা। মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা। আমরা চাই, সিএএ এবং এনআরসি বাতিল করুন।”
দু’দিনের কলকাতা সফরে এসেছেন মোদী। কলকাতা বন্দরের দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে মিলেনিয়াম পার্কে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মোদী। জলপথে যাবেন বেলুড় মঠেও। কলকাতায় পা রাখার আগেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মোদী টুইট করেন— “আমি আনন্দিত এবং উত্সাহিত যে আজ এবং আগামিকাল পশ্চিমবঙ্গে কাটাব।”