প্রথাগত ভাবনার বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ কোনও বাঙালি ব্যবসা করার কথা ভাবলে সম্মুখীন হতে হয় সেই প্রাচীন প্রবাদের — ‘বাঙালির রক্তে ব্যবসা নেই’। এই প্রবাদকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে বাংলার শিল্পক্ষেত্রে নবজাগরণ ঘটিয়েছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি দার্শনিক, কবি, রসায়নবিদ ও শিল্পপতি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। বেঙ্গল কেমিক্যালের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতীয় রসায়নের জনক স্যার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় শুধুমাত্র এক অসাধারণ বিজ্ঞানীই ছিলেন না, বরং তিনি বাঙালি যুবকদের মধ্যে ব্যবসায়িক চেতনাকে জাগিয়ে তুলতেও অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
প্যানেলিস্ট
শিল্পক্ষেত্রে তাঁর এই ব্যতিক্রমী অবদানকে পুনরায় স্মরণ করতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল এবং বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে গত ২ অগস্ট আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকীতে এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলা ও বাঙালির গর্ব আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। তাই এই বিশেষ দিনে শিল্প ও বিজ্ঞানে তাঁর কৃতিত্ব প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর অবদানকে সম্মান করাই ছিল এই আলোচনা সভার মূল উদ্দেশ্য। আলোচনার বিষয় ছিল, ‘বাঙালি তরুণ সম্প্রদায়ের পথপ্রদর্শক হোক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জীবন দর্শন।’
আলোচনা সভার একটি মুহূর্ত
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি এই আলোচনা সভাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিল। প্যানেলের মডারেটর হিসেবে ছিলেন বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সদস্য অ্যাভেলো রায়। প্যানেলিস্টদের তালিকায় ছিলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য এবং বিজ্ঞানী শিবাজী ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জীবনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও প্রভাবের বিষয়ে বিশেষ ভাবে আলোকপাত করেছেন তিনি। এ ছাড়াও ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শুভব্রত সরকার। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ, পদ্মভূষণ স্বপন দাশগুপ্ত। সভায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের শিল্পক্ষেত্রে অপরিসীম অবদানের বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা করেন তিনি। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন তরুণ প্রজন্মের ব্যবসায়ী বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও দেজ়’ মেডিক্যাল স্টোরের ডিরেক্টর ঋষভ দে।
বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও দেজ়’ মেডিক্যাল স্টোরের ডিরেক্টর ঋষভ দে
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক শুভাশিষ দত্ত আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, “বাঙালিদের ইতিহাসে এক বিরাট অবদান রয়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের। যা আজ আমরা অনেকেই ভুলতে বসেছি। সেই সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই আলোচনা সভা। শিল্প ক্ষেত্রে এপিসি রায়ের অবদান অপরিসীম। কিন্তু তাঁর দেখানো পথে কি যুব সমাজ এগোচ্ছে? যদিও বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছে তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসামুখী করে তোলার। শুধু চাকরিই নয়, ব্যবসা করেও জীবন গড়া যায়। এই মানসিকতা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চার হলে তবেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রতি আমরা সঠিক ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারব বলে আমার মনে হয়।”
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য, বিজ্ঞানী শিবাজী ভট্টাচার্যের কথায়, “আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এক অগ্রগণ্য বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ছিলেন। যুবকদের মধ্যে শিক্ষা এবং স্বনির্ভরতার প্রচার করতেন তিনি। তাঁর জীবন ও শিক্ষাগুলি আজকের বাঙালি যুবকদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ দিশা প্রদর্শন করে। আমি তাঁকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম জানাই।”
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য, বিজ্ঞানী শিবাজী ভট্টাচার্য
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সেক্রেটারি ও কিউরেটর সমরেন্দ্র কুমার বলেছেন, “বাংলা ও বাঙালির গর্ব আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল, যা ভীষণ ভাবে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। এই আলোচনা সভার মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে কী ভাবে উন্নতি সম্ভব, সেই বিষয়গুলি খুব সুন্দর ভাবে উঠে এসেছে। তরুণ প্রজন্মের যাঁরা ব্যবসার জগতে প্রবেশ করতে চলেছেন, আশা করি তাঁদের জন্যে আজকের এই অনুষ্ঠানটি খুবই ফলদায়ক হয়েছে।”
অনুষ্ঠানের শেষে বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের তরফে একটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে ২ অগস্ট অর্থাৎ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মবার্ষিকীর এই দিনটিকে ‘ন্যাশনাল অন্ত্রপ্রেনরশিপ ডে’ হিসেবে ঘোষণা করার।
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।