শাসকের দাদাগিরি দাসপুরে

ধর্মঘটের ‘শাস্তি’, বাস বন্ধ পরদিনও

ধর্মঘটে বাস চালানো হয়নি। তারই ‘শাস্তি’ দিল শাসক দল। রীতিমতো হুমকি দিয়ে শনিবারও বন্ধ করে রাখা হল ওই রুটের সমস্ত বাস। দলীয় পতাকা গুঁজে গোপীগঞ্জ-সুলতাননগর রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-২ ব্লকের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫
Share:

সুলতাননগরে পথ অবরোধ তৃণমূলের। স্ট্যান্ড থেকে বেরলোই না বাস (ইনসেটে)। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

ধর্মঘটে বাস চালানো হয়নি। তারই ‘শাস্তি’ দিল শাসক দল। রীতিমতো হুমকি দিয়ে শনিবারও বন্ধ করে রাখা হল ওই রুটের সমস্ত বাস। দলীয় পতাকা গুঁজে গোপীগঞ্জ-সুলতাননগর রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-২ ব্লকের ঘটনা।

Advertisement

গোপীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন রুটের প্রায় ২৫টি বাস ছাড়ে। গন্তব্য হাওড়া, কলকাতা, বধর্মান, মেদিনীপুর। শুক্রবার ধর্মঘটের দিনে একটি বাসও চলেনি। তাই পরের দিনও বাস চালাতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল। সে কথা স্বীকারও করেছেন স্থানীয় গোছাতি অঞ্চলে উপপ্রধান মানবেন্দ্র দোলই। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার এই রুটে বাস চলাচল করেনি। তাই শনিবার আমরাও বাস বন্ধ করে দিয়েছি। এটা দলেরই সিদ্ধান্ত।” তৃণমূল এক ব্লক নেতাও জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতেই একটি জরুরি বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঠিক কী ঘটেছিল?

Advertisement

নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক ওই রুটের এক বাস কর্মীর কথায়, “শুক্রবার রাতেই তৃণমূলের লোকজন আমাদের হুমকি দিয়ে যায়। বলে, শনিবার বাসে ডিউটি করলে মেরে কোমর ভেঙে দেবে। সেই ভয়েই এ দিন রুটের সমস্ত বাস বন্ধ।” প্রথমে এ সব জানা যায়নি। এ দিন সকালে গোপীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীরা আসতে শুরু করেন। আধ ঘন্টা অন্তর বাস ছাড়ার কথা। দাসপুর-২ ব্লকের সদর শহর সোনাখালি যাওয়ার একমাত্র ভরসা ওই গোপীগঞ্জ-সুলতাননগর সড়কটি। তা ছাড়া হাওড়া ও হুগলি জেলার মানুষও নিয়মিত যাতায়াত করেন এই পথেই। বহু চাষিও ফসল নিয়ে যান বাজারে ওইসব বাসের ভরসাতেই। শুক্রবার ধর্মঘটের কারণে এ দিন যাত্রী ভিড় ছিল কিছুটা বেশিও। কিন্তু বাস, ট্রেকার কিছুই চলেনি। সকালেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন যাত্রীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দাসপুর থানার পুলিশ। কিন্তু তার পরেও বাস চালানো যায়নি। মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘‘মালিকপক্ষকে নিয়ে বিকেলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিবার থেকে সুষ্ঠু পরিষেবা যাতে পাওয়া যায়, তা আমরা দেখব।’’

তৃণমূলের দাসপুর-২ ব্লক সভাপতি তপন দত্ত অবশ্য ঘটনায় দলীয় যোগের কথা অস্বীকার করেন, “ঘটনায় আমাদের দল যুক্ত নয়। কিছু বাস মালিক দলের বদনাম করতেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেনে। আমি খোঁজ নিচ্ছি।” তপনবাবু অভিযোগ অস্বীকার করলেও দলীয় কর্মীরা রাখঢাক করেননি। গোপীগঞ্জ সংলগ্ন শয়লা গ্রামে দলীয় পতাকা টাঙিয়ে রাস্তায় গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন তৃণমূলের লোকজন। গোছাতি পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও স্বীকার করেছেন বাস বন্ধের কথা। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তপনবাবুর সাফাই, “বিষয়টি জানা নেই।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, দাসপুর-২ ব্লকের গোপীগঞ্জ এলাকায় সিপিএমের প্রভাব বেশি। ফলে শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটে গোপীগঞ্জ স্ট্যান্ড থেকে কোনও বাসই চলেনি। তবে ওখান থেকে একটি সরকারি বাসও ছাড়ে। সেটি শুক্র ও শনিবার নির্দিষ্ট সময়েই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সিটুর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “শুক্রবার ওই রুটের বাস কর্মীরা ধমর্ঘটকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। আমরা জোর করে কোথাও বাস আটকাইনি। সে জন্যই শনিবার ভয় দেখিয়ে বাস অচল করে দিয়েছে তৃণমূল।’’ তাঁর অভিযোগ, ওই এলাকায় বাস মালিক সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্বদের সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখে খুলতেও নিষেধ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement