৪৮ ঘণ্টা পরেও নেভেনি ভেসেলের আগুন। জ্বলন্ত অবস্থাতেই সেটি ধীরে ধীরে ডুবছে। আর ক্রমশ সরছে উত্তর-পূর্বে, বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। এমন অবস্থায় মাঝসমুদ্র থাকা ভেসেলটিকে নোঙর করানো যাবে কিনা, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।
বুধবার রাতে স্যান্ড হেডের কাছে রাসায়নিকের কন্টেনার বোঝাই ‘এমভিএসএসএল’ ভেসেলটিতে আগুন লাগে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ গিয়ে ২২ জন কর্মীকে উদ্ধার করেছে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ভেসেল থেকে তেল বা রাসায়নিক সাগরের জলে মেশেনি বলে উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে। বাহিনীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুখপাত্র অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট চিত্রা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের জাহাজ ও হোভারক্রাফট ডুবন্ত ভেসেলটির চারপাশে রয়েছে। আকাশপথেও নজরদারি চলছে।’’
বাহিনী সূত্রের খবর, অগ্নিদগ্ধ এবং ডুবন্ত ভেসেলটিকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে এ দিন বৈঠকে বসেন উপকূলরক্ষী বাহিনী, কলকাতা বন্দর এবং ভেসেলের মালিক সংস্থার কর্তারা। উপকূলরক্ষী বাহিনীর আইজি কুলদীপ সিংহ শেওরান জানান, বিকেলে ভেসেলের আগুন কিছুটা কমেছে। ভেসেল মালিক সংস্থাও উদ্ধারকারী দল নিয়োগ করেছে।
আজ, শনিবার ভোরে কলাইকুণ্ডা থেকে হেলিকপ্টারে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁরা ভেসেলটিকে নোঙর করবেন। পোড়া ভেসেল টেনে আনতে বন্দর দু’টি জাহাজও দিয়েছে। তাছাড়াও বিশাখাপত্তনম থেকে নৌসেনার একটি জাহাজ ও হেলিকপ্টার আসছে।
প্রায় চব্বিশ ঘণ্টার মরণপণ লড়াই শেষে উপকূলরক্ষী বাহিনী ভেসেলের ২২ জন কর্মীকে উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ হলদিয়ায় পৌঁছয়। উদ্ধারকারী জাহাজ ‘রাজকিরণ’ তাঁদের নিয়ে যায় উপকূল রক্ষী বাহিনীর নিজস্ব জেটিতে। ২২ জনের সকলকে মালা পরিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। রাতেই তাঁদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সকালে ওই ২২ জনকে সংশ্লিস্ট শিপিং এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মীদের সকলেই ভারতীয় নাগরিক।
দগ্ধ ভেসেলটি মাঝসমুদ্রে ডুবলেও আশঙ্কা যাচ্ছে না। অনেকে বলছেন, সমুদ্রগর্ভে ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকলে জাহাজ চলাচলের পথ অবরুদ্ধ হতে পারে। সমস্যায় পড়তে পারে পণ্যবাহী এবং সেনা জাহাজও। তবে উপকূলরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভেসেলটি যেখানে ডুবছে সেই জায়গার গভীরতা মাত্র মিটার। ওই এলাকা দিয়ে কোনও জাহাজ যাতায়াত করে না। তা ছাড়া, ওখানে সমুদ্রগর্ভে পাথরের বদলে মূলত বালি ও কাদার স্তূপ রয়েছে। ফলে ভেসেল ধাক্কা লেগে ভাঙার আশঙ্কা নেই। বন্দরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘স্যান্ড হে়ডের উত্তর-পূর্ব দিয়ে জাহাজ চলাচল করে। ফলে যেখানে ভেসেলটি ডুবছে তাতে জাহাজ চলাচলে আপাতত কোনও সমস্যা হবে না।’’
আর ভেসেলের ধ্বংসাবশেষ কী হবে সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত উপকূলরক্ষী বাহিনীই নেবে।