পোড়া বিড়িতেও ক্ষতি পরিবেশের

সিগারেট-গুটখা খেলে ক্যানসার হয়। সবাই জানেন। কিন্তু ক’জন জানেন সিগারেটের ফিল্টার, পোড়া বিড়ি কিংবা গুটখার থুতুও পরিবেশের বড়সড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে? পরিবেশবিদ এবং চিকিৎসকদের দাবি, তামাকজাত বর্জ্যও ক্রমশ একটি উৎস হয়ে উঠেছে।

Advertisement

সৌভিক চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

সিগারেট-গুটখা খেলে ক্যানসার হয়। সবাই জানেন। কিন্তু ক’জন জানেন সিগারেটের ফিল্টার, পোড়া বিড়ি কিংবা গুটখার থুতুও পরিবেশের বড়সড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে? পরিবেশবিদ এবং চিকিৎসকদের দাবি, তামাকজাত বর্জ্যও ক্রমশ একটি উৎস হয়ে উঠেছে। সিগারেট, বিড়ি বা গুটখার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে জনমানসে কিছুটা সচেতনতা গড়ে উঠলেও তামাকজাত বর্জ্য নিয়ে সেই মাথাব্যথা নেই। তার জেরেই আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এই ঘাতকেরা নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য।

Advertisement

কিন্তু কী ভাবে?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গুটখা বিক্রি বা প্রকাশ্যে ধূমপান করার বিরুদ্ধে বেশ কিছু আইন বলবৎ হলেও তামাকজাত বর্জ্য নিয়ে কোনও আইন নেই। তা ছাড়া সিগারেট বা বিড়ির পোড়া টুকরো থেকেও যে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে তা কেউ জানেই না। তাই এ জাতীয় বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়াটাই রেওয়াজ। সিগারেটের ফিল্টারের মধ্যে প্রায় চার হাজার বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। যার ষাট-সত্তরটি থেকে ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়াও সিগারেটের ফিল্টারের মধ্যে থাকা ক্যাডমিয়াম, সিসা ইত্যাদিও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভয়ানক ক্ষতিকারক। যেখানে-সেখানে এগুলো ফেলায় বহু প্রাণী তা খেয়ে

Advertisement

অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ওই বর্জ্য জলে মেশায় ক্ষতি হচ্ছে জলজ প্রাণীদেরও। এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, মাত্র একটি সিগারেটের ফিল্টার যদি এক লিটার জলে ৯৬ ঘণ্টার বেশি ডুবিয়ে রাখা হয়, তা হলে সেটি থেকে যে পরিমাণ বিষাক্ত রাসায়নিক জলে মেশে তা জলজ প্রাণীদের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক।

একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গত দু’দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ করছে। গত বছর তারা প্রায় কুড়ি লক্ষ সিগারেটের ফিল্টার উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে। ওই সব বর্জ্য থেকেই বহু ক্ষেত্রে ক্যানসার ছড়ায় বলে তাদের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই ব্যাপক আকার নিয়েছে এই সমস্যা।

তামাকজাত পদার্থ থেকে যাঁরা রোগে আক্রান্ত, তাঁদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনেরও বক্তব্য এক। ‘ভয়েস অব টোব্যাকো ভিকটিমস’ নামে ওই সংগঠনের অন্যতম

সদস্য, ক্যানসার চিকিৎসক সোমনাথ সরকার জানাচ্ছেন, বিভিন্ন পর্যটন ক্ষেত্রগুলিতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নদীনালায় যে পরিমাণ বর্জ্য ফেলা হয় তার একটা বড় অংশই তামাকজাত। মূলত পোড়া বিড়ি এবং সিগারেটের ফিল্টার।’’

একই মত পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্তেরও। তিনি জানাচ্ছেন, তামাকজাত বর্জ্য এখন দেশের একটি বড় সমস্যা। দ্রুত এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। না হলে অচিরেই বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

ক্যানসার চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ আঙুল তুলছেন তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির দিকে। তাঁরা বলছেন, পরিবেশ থেকে শিল্পজাত বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব প্রস্তুতকারক সংস্থার ওপর বর্তায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রং, গাড়ির টায়ার, বৈদ্যুতিন সামগ্রী, ব্যাটারি বা খাবারদাবারের প্যাকেট ইত্যাদি বর্জ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিই সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তামাকজাত বর্জ্য সরানোর ব্যাপারে কোনও মাথাব্যথা নেই প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির।

তা ছাড়া বিভিন্ন সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থা প্রচার চালায়, সিগারেটে ফিল্টার থাকায় ক্ষতি কম হয়। এ কথা মানতে নারাজ ‘ভয়েস অব টোব্যাকো ভিকটিমস’-এর অন্যতম সদস্য এবং ক্যানসার চিকিৎসক সৌরভ দত্ত। তিনি জানাচ্ছেন, তামাক যাতে সরাসরি মুখে না যায় সে জন্যই ফিল্টার ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ফিল্টার শুধুমাত্র নিকোটিন শুষে নেয়। কিন্তু এর সঙ্গে ক্যানসার না হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এ জাতীয় প্রচারে প্রতারিত না হওয়াই ভাল। তাঁর কথায়, ‘‘ফিল্টারের দোহাই দিয়ে এই সব তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।’’

তবে সোমনাথবাবু এবং সৌরভবাবু দু’জনেই মনে করছেন, তামাকজাত বর্জ্য থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

তাঁরা বলছেন, প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। সরকারকে এই কাজে আরও কঠোর হতে হবে। সৌরভবাবুর কথায়, ‘‘প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ হলে রাস্তাঘাটে বর্জ্য ফেলাও অনেকটা কমে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement