মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
একই সঙ্গে ‘বুলডোজ়ার-রাজনীতি’ এবং ‘এনআরসি ষড়যন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে নিজের সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে প্রান্তিক মানুষজনের মধ্যে পাট্টা বিলির মঞ্চেই দেশবাসীর সাংবিধানিক অধিকার থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার রাজনীতির জন্য বিজেপি-কে বিঁধলেন তিনি। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বক্তৃতায় আশ্বাস দিলেন, যে-কোনও উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূল সরকার থাকবে মানুষের পাশেই।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিধানসভায় শুনছি, রেলের উড়ালপুল, ন্যাশনাল হাইওয়ে তৈরির নামে মানুষকে সরানো হচ্ছে। পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ছাড়া বুলডোজ়ার দিয়ে উচ্ছেদ করতে দেব না। এটা আমার সরকারের নীতি নয়। রেলের বা এয়ারপোর্টের জমি থেকে তোলা হলেও আপনারা (বাসিন্দারা) আন্দোলন গড়ে তুলবেন। সরকার আপনাদের পাশে থাকবে।’’
মমতা জানান, ৩০০টি উদ্বাস্তু কলোনি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সবাই পাট্টা পাবে। ৪৭০১টি পাট্টা এ দিন রাজ্যের তরফে বিলি করা হয়েছে। ভূমি, বনজ, কৃষি বা উদ্বাস্তুপাট্টা আরও বাড়ানোর আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ফের বিজেপির ‘এনআরসি-ষড়যন্ত্র’-কে একহাত নেন। বলেন, ‘‘কখনও ভাঁওতা দেওয়া হয়, তোমরা ভারতবর্ষের নাগরিক নও। নাগরিক না-হলে ভোট দিল কী করে? আমাদের ভোটে তুমি প্রধানমন্ত্রী। আর তুমি বলছ, আমায় নাগরিক অধিকার দেবে! এটা কি আমায় অসম্মান করছ না?’’
রাজ্যে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকার কাজ নিয়ে সতর্ক করে মমতা বলেন, ‘‘হয়তো আপনার নাম ঠিক আছে, স্বামীর নাম ভুল। এ-সব দেখিয়ে এনআরসি-র নামে আপনার নাম যেন কেটে দিতে না-পারে। অসমে অনেকের নাম বাদ দিয়েছিল। এনআরসি-র বিরুদ্ধে আমরা বড় আন্দোলন করেছি। বাংলার সবাইকে বলব, নিজেদের নাম তুলুন। নইলে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে পারে।’’
বিধানসভার অধিবেশন এবং পাট্টা বিলির মঞ্চ— দু’দফায় এ দিন সার বরাদ্দে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সার কেন্দ্রের হাতে। যা দরকার,কেন্দ্র তার তিন ভাগের এক ভাগ বরাদ্দ করেছে। তিন বার প্রধানমন্ত্রীকেচিঠি দিয়েছি।’’ ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া টাকার কথা তুলে মমতা বিধানসভায় বিরোধীদের অনুরোধ করেন, দিল্লিতে রাজ্যের হয়ে কথা বলুন। রাজ্যে সারের কালোবাজারির অভিযোগ তুলে বিজেপি বিধায়কেরা বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখান। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সহযোগিতা চাইলে সাহায্য করব। কিন্তু কেন্দ্রকে লেখা চিঠি বিজেপির রাজ্য সভাপতি বা বিরোধী দলনেতাকে দিতে হবে।’’
নেতাজি ইন্ডোরে নাম না-করে রাজ্য বিজেপি নেতাদের আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা বাংলাকে প্রকল্পের টাকা দেবেন না বলে চিঠি লেখেন, তাঁদের নাম বলতে লজ্জা করে। দিল্লির সরকারও সরকারে-সরকারে কথা না-বলে খালি পার্টির কথা শুনছে। দু’তিন দিন কষ্ট হবে। তবে সামলে নেব। আমরাও রাজনীতি করেছি, উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিইনি।’’
তার পরেই বিরোধীদের উদ্দেশে মমতার খোঁচা, ‘‘শুভবুদ্ধির উদয় হোক! আমরা বলতাম, কৈকেয়ী আর মন্থরা কুচুটি। কুটুস কুটুস করে মিথ্যে বলে আর কান ভাঙাচি করে!’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এত দিন তো আমরা হনুমানের পার্টি বলেই জানতাম। এখন শুনছি কৈকেয়ী, মন্থরা! রাজ্য সরকারের কেউ কৌশল্যা, সুমিত্রার ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেই এত বিপত্তি!’’