তৈরি হওয়া স্টেশন ভবন। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে চোখ-কান সজাগ ছিল টিভির পর্দায়। হয়তো এ বার কপাল খুলবে। কিন্তু এক দশক পরেও সেই ‘হতাশ’ নন্দীগ্রাম। সামেন ভোট, তাই এদিন অন্তর্বতী বাজেট পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মূল বাজেট লোকসভার পরে। কিন্তু সামনে ভোট থাকায় নন্দীগ্রামের মানুষ আশা করেছিলেন, অন্তত অন্তর্বতী বাজেটে নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প নিয়ে কোনও দিশা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এদিন ওই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে কোনও কথাই শুনতে না পেয়ে আশাহত রেল প্রকল্পের জন্য জমিদাতারা।
দেশপ্রাণ (বাজকুল) থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত রেল লাইন গড়ে তুলতে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন এমন অনেকেই এখন ‘অনুশোচনা’য় ভুগছেন। এই অবস্থায় আন্দোলনের রাস্তায় হাটার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জমি আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’।
শুক্রবার বাজেট ঘোষণায় আয়কর ছাড়ের পরিমাণ বাড়ার খবরঅনককে খুশি করলেও রেল প্রকল্পে ‘আচ্ছে দিন’ ফিরবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প নিয়ে কোনও ঘোষণা না থাকায় সেই সংশয় আরও দৃঢ় হয়েছে। হরিপুরের বাসিন্দা সুনীল মাইতির কথায়, ‘‘প্রকল্প গড়তে ২৩ ডেসিমাল জমি দিয়েছিলাম। লাইন পাতা তো হয়নি। বরং জমির উপর মাটির ঢিবি জমে গিয়েছে।’’ ওই গ্রামের আরও এক বাসিন্দা অজয় মাইতি বলেন, ‘‘জমি নেওয়া হয়েছিল রেল প্রকল্পের জন্য। কিন্তু সেই আশায় বর্তমান সরকার জল ঢেলে দিয়েছে। এখন যা অবস্থা তাতে জমিও চাষের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে।’’
অসমাপ্ত স্টেশন। —নিজস্ব চিত্র
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাবের জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল বাম সরকার। জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন স্থানীয়রা। পরে কেমিক্যাল হাব গড়ে না উঠলেও, দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল ইউপিএ সরকার। রেল প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমত জমি অধিগ্রহণ, লাইন পাতা এবং স্টেশন ও আবাসন নির্মাণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ইউপিএ জমানায় রেলমন্ত্রক তৃণমূলের ‘হাতছাড়া’ হওয়ার পর থেকেই নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পের গতি ‘শ্লথ’ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্প রেলের বাজেটে ‘স্থান’ পায়নি বলে অভিযোগ।
হিমাদ্রি মাইতি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘বর্তমান কেন্দ্র সরকার গত চার বছরে নন্দীগ্রাম নিয়ে ভাবেইনি। কিন্তু আমরা সহজে হার মানতে নারাজ। প্রয়োজনে ফের বড় ধরনের আন্দোলন হবে।’’ স্থানীয় সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘সংসদের ভিতর ও বাইরে বহুবার নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্পের থমকে থাকা কাজ শুরুর দাবি জানানো হয়েছে তৃণমূলের তরফে। কিন্তু কেন্দ্র তাতে কানই দেয়নি। আগামী দিনে জমি দাতা ও স্থানীয়দের নিয়ে আন্দোলন হলে আমরা পাশে থাকব।’’
এ ব্যাপারে দখিন পূর্ব রেলের জন সংযোগ আধিকারিক (খড়্গপুর ডিভিশন) কুলদীপ তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি । যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘বাংলার স্বার্থে নন্দীগ্রামের রেল প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাব।