খোশমেজাজে। মঙ্গলবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
শাসক তৃণমূলের আচরণের সমালোচনা করতে গিয়ে তাঁরা প্রায়শই বলেন, ‘ফ্যাসিস্তসুলভ কাজ’! কেন এমন তুলনা, এ বার বিশদে তার ব্যাখ্যা দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, ঝটিকা বাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে থানা থেকে শুরু করে যে কোনও প্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়া এবং বারবার মিথ্যা বলে কোনও কিছুকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা— তৃণমূলের আচরণের এই দুই দিক হিটলারের ফ্যাসিবাদী জমানার কাজকর্মকেই মনে পড়িয়ে দেয়।
কলকাতা জেলা সিপিএমের দফতর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মঙ্গলবার ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জয়ের ৭০ বছর’ শীর্যক অনুষ্ঠানের বক্তা ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস রোমন্থন করে তিনি এ দিন বুঝিয়েছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ পৃথিবীর ইতিহাসে কেন তাৎপর্যপূর্ণ। এই সূত্রেই তাঁর সতর্ক-বার্তা, সেই আমলের ফ্যাসিবাদ পরাস্ত হলেও সারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা সময়েই একই রকম প্রবণতা ফিরে ফিরে এসেছে। যেমন, এখন এ দেশ এবং এ রাজ্যের পরিস্থিতির মধ্যে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বুদ্ধবাবুর কথায়, ‘‘নতুন ধরনের শক্তির উত্থান ঘটেছে কেন্দ্রে। আরএসএস আর কর্পোরেট হাত মিলিয়েছে। হিটলারের জার্মানিতেও কিছু বড় শিল্প সংস্থা প্রথমে তাঁকে সমর্থন করেছিল।’’
তবে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের চেয়েও এ রাজ্যের তৃণমূল জমানার প্রতি প্রত্যাশিত ভাবেই আরও বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন বুদ্ধবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে যে দলটি দাপাদাপি করছে, তাদের আমরা আধা-ফ্যাসিস্তসুলভ বলি। এটা কেন বলি? কারণ, এই দলটির নীতি হল থানা দখল করো, জেলাশাসকের অফিস বা রেলস্টেশন দখল করো, পুলিশকে মারো-পেটো, একে ধরো, তাকে কামড়াও! একেবারে সেই জার্মানির গেস্টাপো বাহিনীর চেহারা!’’ সেই সঙ্গেই বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জমানার জার্মানির মতো ক্রমাগত মিথ্যার কারবার চলছে এ রাজ্যে। তাঁর বক্রোক্তি, ‘‘বারবার মিথ্যা বলো। একটা মিথ্যাকে বারবার বলে বিশ্বাস করাও। তা হলেই আমাদের মতো দেশপ্রেমিক আর হয় না!’’ রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে এ দিনই জঙ্গলমহলের পুরনো ‘জনগণের কমিটি’র নেতা ছত্রধর মাহাতোকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বাম জমানায় ছত্রধরের সঙ্গে তৃণমূল নেতারা যে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই বুদ্ধবাবুর কটাক্ষ, ‘‘কখনও আরএসএস, কখনও ছত্রধর, কখনও মাওবাদী, সকলের হাত ধরেছেন ওঁরা। ওঁদের মতো দেশপ্রেমিক হয় না!’’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই আক্রমণের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘বুদ্ধবাবু যদি এগুলো আত্মসমালোচনা হিসেবে বলে থাকেন, তা হলে আমাদের আপত্তির কিছু নেই! কারণ এই দখল, মারধর, মিথ্যার রাজনীতি ৩৪ বছর ধরে আমরা ওঁদেরই তো করতে দেখেছি!’’