কলকাতায় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বাংলা পত্রিকার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে বৃন্দা। নিজস্ব চিত্র।
মতাদর্শগত ও সাংস্কৃতিক লড়াই চালাতে হবে বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে। তারাই এখন সামনে প্রবল প্রতিপক্ষ। কলকাতায় এসে দলের এই লক্ষ্য স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট। সেই সঙ্গেই জানালেন, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই সংগ্রাম চলছে।
বিজেপি-কে প্রধানতম প্রতিপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করে কংগ্রেস-সহ সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াই চালানো হবে? নাকি বিজেপি-র মতো কংগ্রেসের থেকেও সমদূরত্বের লাইন নিয়ে চলা হবে? আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএমের অন্দরে এই বিতর্ক এখন তীব্র। পলিটব্যুরোর মধ্যে কংগ্রেস-বিরোধী অংশের অন্যতম মুখ হিসাবেই পরিচিতি বৃন্দার। কিন্তু কলকাতায় শুক্রবার গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বাংলা পত্রিকার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে সেই বৃন্দার গলায় যে সুর শোনা গিয়েছে, তা প্রায় সীতারাম ইয়েচুরির মতেরই প্রতিধ্বনি। বৃন্দার এই বক্তব্যকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ব্যাখ্যা করছে সিপিএমের একাংশ।
মৌলালি যুবকেন্দ্রে এ দিনের অনুষ্ঠানে বৃন্দা বলেন, ‘‘কাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সেই প্রশ্নে যেন কোনও অস্পষ্টতা না থাকে। বিজেপি-আরএসএস এখন বড় বিপদ। তাদের জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদ তারা আমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে চায়।’’ গেরুয়া পরিবার যা করছে, মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এমন আগ্রাসী আক্রমণের মুখে আগে পড়তে হয়নি বলেও মন্তব্য করেন বৃন্দা। তাঁর মতে, আন্দোলন বা সংগঠন চেষ্টা করে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু মতাদর্শগত অস্পষ্টতা বা বিভ্রান্তি থাকলে রাস্তায় মিটিং-মিছিল-আন্দোলন করেও বেশি দূর এগোনো যায় না।
মহিলা সমিতির বাংলা পত্রিকার সম্পাদক এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য বনানী বিশ্বাস এ দিন বলছিলেন, মহিলাদের আন্দোলন ও কাগজ যাত্রা শুরুর পরে বহু বার শাসক কংগ্রেসের কোপের মুখে পড়েছে। শ্রেণি সংগ্রামের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে তাদের সঙ্গে কোনও সমঝোতা উচিত নয়। মঞ্চে বসেই বাড়তি মনোযোগ দিয়ে বনানীদেবীর ওই বক্তব্য শোনেন বৃন্দা। লক্ষ্যণীয় ভাবে, পরে বলতে উঠে তিনি কিন্তু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কোনও শব্দ খরচ করেননি। বরং, বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, গেরুয়া বিপদকে ঠেকাতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে জোরদার লড়াই চালাতে হবে বামপন্থীদের।
বাংলায় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও মহিলাদের সম্মান ও নিরাপত্তা বিপন্ন বলেও এ দিন অভিযোগ করেছেন বৃন্দা। পাশাপাশিই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এখন বিশ্ব বাংলার পেটেন্ট, স্বত্বাধিকার নিয়েও লড়াই হচ্ছে। এর পরে বাংলার নামটাও ওরা বেসরকারি করে দিয়ে পেটেন্ট দাবি করবে! মুনাফা আর দুর্নীতি চলছে!’’