বুধবার বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে শিক্ষকের শূন্যপদ কত, মঙ্গলবার বিধানসভায় তার একটা হিসাব দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু এক দিন পর সেই তিনিই দিলেন নতুন হিসাব। মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে রাজ্যে শিক্ষকের মোট শূন্যপদ ৭৮১। বুধবার ‘সংশোধিত’ হিসাব দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, শূন্যপদের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।
মঙ্গলবার ব্রাত্য বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ১৩টি, মাধ্যমিকে ২৮টি, উচ্চ প্রাথমিকে ৪৭৩টি এবং প্রাথমিকে ২৬৭টি শূন্যপদ আছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ৭৮১। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি বলেছিলাম, শিক্ষকের শূন্যপদ কত, আমার পক্ষে এই মুহূর্তে তা বলা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ অবসর নিচ্ছেন। আমার কথা নিয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য দিয়ে সেই বিতর্কের অবসান করতে চাই।’’
এর পর রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থার চার স্তরে কোথায় কতগুলি শূন্যপদ আছে, নতুন করে ব্যাখ্যা দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনকে আমরা ২০২২ সালে যে তথ্য পাঠিয়েছি সেই অনুযায়ী, প্রাথমিকে এখন শূন্যপদ ১১,৭৬৫। ইতিমধ্যে ওই পদে নিয়োগ শুরু হয়েছে। উচ্চ প্রাথমিকে শূন্যপদের সংখ্যা ১৪,৩৩৯, সেখানে আদালতের নির্দেশে কাউন্সেলিং চলছে। এ ছাড়া, মাধ্যমিকে ১৩,৫০০-র কিছু বেশি পদ খালি আছে। উচ্চ মাধ্যমিকে শূন্যপদের সংখ্যা ৫,৫০০-র বেশি। এই পদগুলিতে আদালতের নির্দেশ পেলে নির্দিষ্ট ভাবে যাতে নিয়োগ শুরু করা যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পরেও সামান্য যা পদ খালি পড়ে আছে, বিধানসভায় আমি তাৎক্ষণিক ভাবে তা নিয়ে মন্তব্য করেছি।’’ শূন্যপদের আনুমানিক সংখ্যাই তিনি বলেছিলেন বলেও জানান ব্রাত্য।
মঙ্গলবার বিধানসভায় ব্রাত্য যে হিসাব দেখিয়েছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল নানা মহলে। প্রশ্ন উঠেছিল, যেখানে কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী বছরের পর বছর আন্দোলন করছেন, যেখানে বহু বছর ঠিক মতো নিয়োগ হয় না বলে অভিযোগ এবং প্রায় তিন লক্ষ পদ শূন্য বলে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের দাবি, সেখানে মোটে ৭৮১টি শূন্যপদের ব্যাখ্যা কী? মন্ত্রীর দাবির সঙ্গে কোর্টে দাঁড়িয়ে তাঁর দফতরের বয়ানও মিলছিল না! নিয়োগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক পদের চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘খোদ শিক্ষা দফতর কোর্টে জানিয়েছিল, মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ১৩ হাজার এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পদ শূন্য। কয়েক বছর আগেই প্রায় ৩৩০০ শূন্যপদে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়েছিল। একটি পদেও নিয়োগ না হওয়ায় সেই শূন্যপদ এত দিনে আরও বেড়ে যাওয়ার কথা।’’ বিতর্ক শুরু হতেই শূন্যপদের নতুন হিসাব দিলেন ব্রাত্য।