ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
দাবি উঠছে, আবেদন আসছে সর্বস্তর থেকেই। প্রশাসনও যে সর্বান্তঃকরণে স্কুলের নিচু ক্লাস চালু করে দেওয়ার কথা ভাবছে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজেই রবিবার সেটা স্পষ্ট করে দিলেন। কাল, মঙ্গলবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন ফের শুরু হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন আশ্বাস দেন, শুধু নবম থেকে দ্বাদশ নয়, অচিরেই নিচু ক্লাসও চালু করে দেওয়ার কথা
ভাবছে রাজ্য সরকার। তবে সেটা হবে ধাপে ধাপে।
ব্রাত্যবাবু বলেন, ‘‘জীবনের মূল স্রোতে ছাত্রছাত্রীদের ফেরানোটাই আমাদের প্রাথমিক অভিপ্রায়। তাই ধাপে ধাপে সব ক্লাসই খুলব। আমরা এখন নবম থেকে দ্বাদশ খুলছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলছি। এই অবস্থা কিছু দিন দেখে, পরিস্থিতি দেখে নিয়ে নিচু ক্লাসও খুলব।’’ শিক্ষামন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল, কলেজ খোলার কথা ঘোষণা করেছেন। সেই অনুযায়ী নবম থেকে উঁচু দিকে চারটি শ্রেণির পাঠ ফের শুরু করে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী কালে পরিস্থিতি দেখে ধাপে ধাপে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ব্রাত্যবাবু বলেন, ‘‘পুরো স্কুলই খুলে দেওয়ার ইচ্ছা আছে আমাদের।’’
নিচু শ্রেণির পঠনপাঠনও শুরু করে দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্য সমর্থন করেছেন অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠন। শিক্ষকদের মতে, এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন স্কুল খুলেছিল, তখনও ক্লাস চালু হয়েছিল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্যই। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা তখনও স্কুলে যেতে পারেনি। তার পরে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় স্কুল ফের বন্ধ হয়ে যায়। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘নিচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে আসছে না। গ্রামাঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল বলে অনলাইন ক্লাসও ব্যাহত হয়। পড়াশোনার সঙ্গে অনেক ছেলেমেয়েরই সম্পর্ক থাকছে না। তাই পরিস্থিতি দেখে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিচু ক্লাসও চালু করা দরকার।’’
শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, অতিমারির আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা স্কুলে রান্না করা মিড-ডে মিল পেত। এখন অভিভাবকদের হাতে মিড-ডে মিলের সামগ্রী তুলে দেওয়া হলেও রান্না করা খাবার না-পাওয়ায় পড়ুয়াদের পুষ্টি কতটা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তাই পড়াশোনার বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি পুষ্টির কারণেও যথাশীঘ্র নিচু ক্লাসের পঠনপাঠন শুরু করা দরকার।
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে তো যাচ্ছেই না। উপরন্তু তাদের অনেকে পরিবারের প্রয়োজনে নানা কাজেও নিয়োজিত হয়ে গিয়েছে। সেই স্কুলছুটদের ফেরানোটাও একটা চ্যালেঞ্জ। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস শুরু করতে যত দেরি হবে, স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনাও ততই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই দ্রুত পুরো স্কুলই খুলে দেওয়া দরকার। গ্রামাঞ্চলের কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, মিড-ডে মিলের জিনিসপত্র নিতে আসা অনেক অভিভাবক বলছেন, অনলাইনে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্মার্টফোন, ল্যাপটপ নেই তাঁদের নেই। এই অবস্থায় তাঁদের প্রশ্ন, কবে ফিরবে চক-ডাস্টার-ব্লাকবোর্ডের ক্লাসরুম?
তবে বাচ্চাদের করোনা টিকাকরণ না-হওয়ায় এখনই তাদের স্কুলে পাঠাতে দ্বিধা আছে এক শ্রেণির অভিভাবকের। তাঁদের বক্তব্য, কোনও কোনও ছেলেমেয়ে নানা কাজে বাইরে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু স্কুলে গেলে তাদের অনেক বেশি সময় বাইরে থাকতে হবে। তাই বাচ্চাদের অন্তত একটা ভ্যাকসিন দিয়ে স্কুলে পাঠাতে পারলে তাঁরা কিছুটা আশ্বস্ত হতে পারেন।