গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণ। হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি মরদেহ দেখতে পারবেন না। মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই শোক থেকে অনেকের মতো এখনও বেরোতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আনন্দবাজার অনলাইনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘এই সে দিন সকালে খবরের কাগজে পড়লাম সুব্রতদা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এ বার শুধু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর খবর এতটাই আকস্মিক এবং এতটাই অপ্রত্যাশিত, যে, এর ঘোর আমরা কেউই কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সংবাদমাধ্যমে দেখছি, একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী, সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, সোমেন মিত্র, একটা রাজনৈতিক প্রজন্ম হারিয়ে গেল।’’
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই সুব্রত-প্রসঙ্গ ওঠায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ব্রাত্য। স্মৃতি থেকে তুলে আনলেন নানা প্রসঙ্গ। বললেন, ‘‘সুব্রতদা মানুষের সবচেয়ে বেশি ভালবাসা পেয়েছেন। তাঁর সহিষ্ণুতার জন্য, মজার কথা বলার জন্য, স্নেহ-প্রবণতার জন্য তিনি বারবার সব বয়সের মানুষের কাছে আপন মানুষ হয়ে উঠেছেন। যেমন সংবাদপত্রে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন তাঁর এক মজার অভিজ্ঞতার কথা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য লিখেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। আমিও বিধানসভায় দেখেছি, সুব্রতদার নানা মন্তব্য স্মরণীয় হয়ে আছে। মনে আছে, এক বাম বিধায়ক বিধানসভায় বক্তৃতা করছেন, এমন সময় সুব্রতদা উঠে এমন একটা কথা চেঁচিয়ে বললেন যে, বক্তব্যের খেই হারিয়ে ফেললেন ওই বিধায়ক। তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘সুব্রত দা, আপনি এ ভাবে বলতে পারেন না।’ ও দিকে সুব্রতদা তখন মিটিমিটি হাসছেন। তার পর সভায় হাসির রোল উঠল।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রতর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, পারিবারিক যোগের কথা সকলেই জানেন। সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন ব্রাত্য। বললেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আন্তরিক ভাবে সুব্রতদাকে শ্রদ্ধা করতেন। নিজের দাদার মতো দেখতেন। এই মৃত্যু ওঁকে খুবই মর্মাহত করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আপনি’ বা ‘তুমি’ বলতেন না সুব্রতদা। কিন্তু আমাদের সামনে, ক্যাবিনেটে কোনও দিন সুব্রতদা ব্যক্তিগত সম্বোধনে কথা বলেননি, ভাববাচ্যে কথা বলতেন।’’ ব্রাত্য জানালেন, তাঁর সঙ্গেও এক ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সুব্রতর। বয়স, অভিজ্ঞতার ফারাক পেরিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন তাঁকে। ব্রাত্য বললেন, ‘‘সুব্রতদা আমার থিয়েটার দেখেছেন, আমি কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সেখানে সুব্রতদা গিয়েছেন। টের পেয়েছি আমার জন্য ওঁর মনে আলাদা একটা ভালবাসা রয়েছে। আমাদের থেকে অভিজ্ঞতায়, বয়সে অনেকটাই বড় ছিলেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আড্ডায় বসলে কোনও দিন ওঁকে দূরত্ব রাখতে দেখিনি। বরং সব সময় মিশে যেতে পারতেন সব বয়সের মানুষের সঙ্গে। সুব্রতদার বর্ণময়তার কারণেই তিনি অনুনকরণীয়। ওঁকে সাধারণ মানুষ, গণমাধ্যম যেমন মিস করবে, তেমনই আমরা, মন্ত্রিসভার সদস্যরাও মিস করব।’’