ছবি: সংগৃহীত।
বৌবাজারে সুড়ঙ্গ-বিপর্যয়ের পরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজে রাশ টেনে ধরেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সুড়ঙ্গে ধস নামার জেরে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার রাজ্যের কাছে জানতে চাইল, কোনও বিপর্যয় হলে তার মোকাবিলা করার জন্য সরকারের কী পরিকল্পনা রয়েছে।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের প্রেক্ষিতে কী ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, ৭ নভেম্বর, পরবর্তী শুনানিতে তা লিখিত ভাবে পেশ করতে হবে। ওই দিন পর্যন্ত আদালতের অনুমতি ছাড়া ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ ফের শুরু করা যাবে না।
প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার পরে তার মোকাবিলা তো করতেই হবে। কিন্তু বিপর্যয় আটকাতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া অনেক বেশি জরুরি। তাতে জীবনহানি বা ক্ষয়ক্ষতি কমে।
রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি তালে মাসুদ সিদ্দিকি এ দিন আদালতে জানান, কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড বা কেএমআরসিএলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার একটি কোর কমিটি তৈরি করেছে। গৃহহীনদের পুনর্বাসনের কাজ দেখভাল করবে ওই কমিটি।
কেএমআরসিএলের আইনজীবী রঞ্জন বাচাওয়াত আদালতে জানান, বৌবাজারে সুড়ঙ্গে জল ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। আর কোথাও যাতে ধস না-নামে, তা নিশ্চিত করতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্পের প্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞেরা সাহায্য করছেন। আইআইটি-সব বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞেরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় নজরদারি চালাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৭৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। যে-সব বাড়ির পরিকাঠামো বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে, সেখানে বাসিন্দাদের ফেরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে দফায় দফায়। কিছু বাড়ি ‘নিরাপদ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়েছে মোট ৮৩টি পরিবারকে।
কেএমআরসিএলের আইনজীবী আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনে যত দ্রুত সম্ভব ছন্দ ফিরিয়ে আনাটাই এখন মেট্রো-কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য।
জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী ঋজু ঘোষাল আদালতে জানান, যে-সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, তার সবই তো মৌখিক ভাবে আদালতে জানানো হল। ঠিক কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কর্তৃপক্ষকে সেটা হলফনামা দিয়ে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হোক।
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, বিপর্যয় মোকাবিলা কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, রাজ্য ও কেএমআরসিএল-কর্তৃপক্ষকে তা পৃথক ভাবে লিখিত আকারে পেশ করতে হবে। মামলায় যুক্ত করতে হবে কলকাতা পুরসভার কর্তৃপক্ষকেও। রাজ্য সরকারকে লিখিত জানাতে হবে, যে-কোনও বিপর্যয়ের মোকাবিলায় তাদের পরিকল্পনা কী।