বগটুইকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’-র তদন্ত করবে পুলিশ। জানালেন বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার (ডান দিকে) নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। —নিজস্ব চিত্র।
সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন বগটুইকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র তদন্ত করবে বীরভূম জেলা পুলিশ। সোমবার রাতে এমনটাই জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে যে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, পুলিশ তার কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে রামপুরহাটের অস্থায়ী সিবিআই ক্যাম্পের শৌচাগারে লাল রঙের গামছা গলায় জড়ানো অবস্থায় লালনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। সিবিআই সূত্রে দাবি, লালন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। পুলিশ যদিও লালনের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে। সোমবার রাতে রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরে যান নগেন্দ্র। ওই শিবিরের বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের ডিআইজির অফিস থেকে আজ (সোমবার) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট নাগাদ আমাকে টেলিফোনে জানানো হয় যে, সিবিআই হেফাজতে থাকা লালন শেখের জেরা চলছিল। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে যে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, তা শুরু করেছি আমরা। ৪টা ৪০ মিনিট নাগাদ এ নিয়ে সিবিআইয়ের তরফে স্থানীয় থানাকেও জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু করবে পুলিশ। এ নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তও হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হবে। আমরা সেই রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। সিবিআই আমাদের বলেছে, (লালন) আত্মহত্যা করেছেন।’’ সোমবার রাতেই সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরে তদন্তে পৌঁছন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বজিৎ ঘোষও। রাতেই লালনের দেহ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২১ মার্চ রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় নিহত হন রামপুরহাটের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ। খুনের রাতেই বগটুই গ্রামের বহু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় ১০ জন মারা যান। এ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার গ্রহণ করে সিবিআই। লালনের বিরুদ্ধে বগটুইয়ের বাড়িগুলিতে আগুন ধরানোর অভিযোগ উঠেছিল। দিন কয়েক আগে তাঁকে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এর পর ৪ ডিসেম্বর লালনকে রামপুরহাট আদালতে হাজির করা হলে তাঁকে ৬ দিনের সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে লালনকে খুনের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, হেফাজতে থাকাকালীন লালনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। লালনের মৃত্যুর প্রতিবাদে সোমবার রাতে বগটুই মোড়ের ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তাঁর পরিবারের সদস্য-সহ আত্মীয়-পরিজনেরা। পুলিশকর্তাদের বোঝানোর পর অবশ্য অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।