ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
সাত সকালে এক তৃণমূল নেতার বাড়ির ছাদে বোমা ফাটার ঘটনা নিয়ে তেতে উঠল উত্তর ২৪ পরগণার হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র। স্থানীয়দের আতঙ্কের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনের মুখে তবে কি বাড়ির ছাদে বোমা তৈরি করছিলেন ওই নেতা? নাকি কেউ বাইরে থেকে এমন কাজ করছে? জবাব পেতে অবশ্য তদন্তই ভরসা। কারণ এই ঘটনার পরই বাড়ি ছেড়ে সপরিবারে গা-ঢাকা দিয়েছেন তৃণমূলের নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য আরিফুল ইসলাম। যদিও তাঁকে নিয়ে এলাকায় বিজেপি, তৃণমূল এবং সিপিএম সমর্থিত আব্বাস সিদ্দিকির দলের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়ছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, বোমা নয়, চকোলেট বোমের মতো নিরীহ বাজি ফেটেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন বারাসতের শাসন থানার দাঁতপুর পঞ্চায়েতের পাতরা গ্রামে। বিজেপির অভিযোগ, নির্বাচনের মুখে এলাকায় বিজেপি নেতাদের মারার জন্যই বোমা মজুত করছিলেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তাতেই বোমা ফেটে আসল ঘটনা সামনে চলে এসেছে। শাসন এলাকার বিজেপি-র স্থানীয় সহ সভাপতি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতে বেশ কিছু বিজেপি সদস্য রয়েছেন। ভোটের আগে তাঁদেরই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন আরিফুল এবং তাঁর সঙ্গীরা। স্থানীয় এক তৃণমূল অবশ্য আরিফুলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা আর দলের বদনাম করার অভিযোগ এনেছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৃণমূল কর্মী মহম্মদ আবদুল গাইনের বক্তব্য, নির্বাচনের আগে তৃণমূল এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন আরিফুল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এমন চেষ্টা করে চলেছেন। ইদানিং কংগ্রেস সিপিএমের সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেড়েছে বলেও দাবি করেছেন আবদুল। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘এখন আব্বাস ভাইজানের কথায় প্রভাবিত হচ্ছেন আরিফুল। আব্বাসের দল আইএসএফে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।বাড়িতে বোমা তৈরি করে তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা আসলে আব্বাসদের দলেরই চক্রান্ত।’’
সোমবার সকাল দশটার কিছু আগে যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন কাছেই একটি দোকানে ছিলেন আবদুল। জানিয়েছেন, হঠাৎই বিস্ফোরণের প্রবল আওয়াজে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, সপরিবারে বাড়ি ছেড়েছেন আরিফুল। আবদুলের অভিযোগ, একের বেশি বোমা ফেটেছে। তবে আরও বোমা বাঁধা হয়েছিল। সম্ভবত সেগুলো রোদে শুকোতে দেওয়া ছিল। বিপদ বুঝে সেগুলো বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছেন আরিফুলরা। খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শাসন থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে তারা।
তবে তৃণমূলের তরফে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘ওই বোমা চকোলেট বোম ছিল বলেই মনে করছে পুলিশ। তা ছাড়া আরিফুল দলের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে বরাবর। সে এমন কাজ করেনি বলেই অনুমান। তবে গোটা বিষয়টি দলের তরফে তদন্ত করে দেখা হবে।’’ এ ব্যাপারে বিজেপি-র অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘হাড়োয়া বিধানসভায় বিজেপি কোথায়? যা হোক বলে দিলেই তো হল না। পতাকা টাঙানোরই লোক পাওয়া যায় না ওঁদের!’’