'চাকরি প্রতিশ্রুতি কার্ড' নামক প্রচার কর্মসূচিতে মুকুল রায়, সৌমিত্র খাঁ। ফাইল চিত্র।
বাইরে এবং ঘরে প্রবল সমালোচনার মুখে বিধানসভা ভোটের আগে বেকারদের চাকরির ‘টোপ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল বিজেপি।
গত ১৩ ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় এবং দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড প্রকাশ করেছিলেন। সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, ওই কার্ড নিয়ে ৭৫ লক্ষ যুবক-যুবতীর বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘বিজেপি চার মাস বাদে রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে। তাই এখন থেকেই এ ভাবে কর্মপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করে রাখা হবে।’’ সৌমিত্রর ওই ঘোষণার পরে রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা ছিল, চাকরি পেতে আগ্রহী এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনদের ভোট বিজেপি এই ভাবে সংগ্রহ করতে চায়। তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের মত ছিল, এই ধরনের কাজ শুধু নীতি বহির্ভূতই নয়, চরম ভাঁওতা।
বিজেপি সূত্রের খবর, শুধু দলের বাইরে নয়, সৌমিত্রর ওই ঘোষণার পরে দলের অন্দরেও একাধিক আশঙ্কা এবং প্রশ্ন দেখা দেয়। দলেরই অনেক নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ভাবে চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড নিয়ে কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেতে দেওয়া হলে দুর্নীতি হতে পারে। বিধানসভা ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তিতে ওই কালি লাগার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না বলে মত দেন তাঁরা। দলের আর এক অংশ প্রশ্ন তোলে, রাজ্যে কর্মপ্রার্থীদের নাম নথিভুক্ত করার নির্দিষ্ট সরকারি সংস্থা রয়েছে। সরকারি চাকরি পেতে হলেও নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। সুতরাং দল সরকারে এলেও রাজনৈতিক ভাবে ফর্ম পূরণ করিয়ে কর্মপ্রার্থীদের চাকরি দেওয়া কী ভাবে সম্ভব? আর তা সম্ভব না হলে প্রতিশ্রুতি পালন না করার যে দায় দলের উপরে আসবে, তার জবাব কী হবে? কয়েক জন নেতা দলের অন্দরে আরও বলেন, বিজেপি দেশের কোথাও কাউকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। কর্মসংস্থান বা রোজগারের পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এখানে ‘চাকরি’র প্রতিশ্রুতি দিলে মানুষ বিভ্রান্ত হবেন। এই প্রেক্ষিতেই ‘চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড’ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করে দিয়েছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে দলের পরিকল্পনা ছিল, রাজ্যের বেকার-সংখ্যা জানতে সমীক্ষা করা হবে। কিন্তু পরে তা কোনও ভাবে ‘চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড’-এ বদলে যায়।
এ নিয়ে মুকুলবাবু এবং সৌমিত্রের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দু’জনের কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁরা মেসেজেরও জবাব দেননি। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে বিজেপি চাকরি বলতে কর্মসংস্থানের কথাই বোঝায়।’’