গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে সমাজমাধ্যম কতটা শক্তিশালী। তবে তা ব্যবহারে বামেদের চেয়ে বিজেপি যে পিছিয়ে, তাও স্পষ্ট। এমনই আবহে রাজ্যের বিজেপি সাংসদদের কাছে দলের সর্বোচ্চ কমিটি থেকে একটি নির্দেশিকা এসেছে। একান্ত গোপন সেই নির্দেশনামা পাঠিয়েছে দলের সংসদীয় পার্টি। সেখানে সাংসদদের সমাজমাধ্যম ব্যবহারবিধি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কী কী করতে হবে তার ন’দফা নির্দেশের পাশাপাশি বেশ কিছু পরামর্শও রয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসদদের পাশাপাশি বিধায়ক, রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতাদেরও সমাজমাধ্যমে সক্রিয় করতে চাইছে দল। শুরুটা হচ্ছে সাংসদদের দিয়ে। তাও শুধু বাংলায় নয়, গোটা দেশের সব সাংসদদের দিয়েই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবরই সমাজমাধ্যমে সক্রিয়। নির্বাচনের সময়ে তিনি নিজে যেমন বিভিন্ন সমাজমাধ্যম ব্যবহার করেন তেমনই সারা বছরই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন নিজস্ব ‘নমো’ অ্যাপের মাধ্যমে। চলতি বছরে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন রয়েছে। শুরু হয়েছে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও। দলের রীতি মেনে প্রধানমন্ত্রীকেও নতুন করে সদস্য হতে হয়েছে। এর মধ্যেই দলের সাংসদদের ফেসবুক, এক্স (পূর্বতন টুইটার), ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় করতে চাইছেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।
যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, তাতে রয়েছে মোট ন’টি নির্দেশ। বলা হয়েছে, সাংসদদের সব প্ল্যাটফর্মে প্রতি দিন সাত-আটটি পোস্ট করতে হবে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ ভিডিয়ো হওয়া চাই। বিরোধী দলগুলিকে আক্রমণ করায় দিতে হবে বাড়তি গুরুত্ব। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে পোস্ট চাই। ‘মন কি বাত’, সাধারণ বাজেট, নির্বাচনের ফল ইত্যাদি নিয়ে পোস্ট বাধ্যতামূলক। এর জন্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পোর্টালে নজর রাখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলের জাতীয় এবং রাজ্য স্তরের সমাজমাধ্যমের পোস্টও দেখতে হবে। শুধু এটুকুই নয়, বিজেপি সাংসদদের আরও নির্দেশ, বিরোধী দলগুলির সমাজমাধ্যমে কী কী পোস্ট তা নজরে রাখার কথাও বলা হয়েছে।
কোনও পোস্টের ক্ষেত্রে তথ্যের প্রয়োজন হলে তা কোথা থেকে নেওয়া যাবে, তার উল্লেখ রয়েছে ছ’নম্বর নির্দেশিকায়। তার জন্য উল্লেখ রয়েছে ন’টি সূত্রের। প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সমাজমাধ্যম পোস্ট, নমো অ্যাপ, বিজেপির জাতীয় এবং বিভিন্ন রাজ্যের সমাজমাধ্যম পোস্ট, অন্যান্য নেতাদের পোস্ট দেখতে হবে। তবে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে নজর রাখতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি জোটের মুখ্যমন্ত্রীরা কী কী পোস্ট করছেন তা-ও খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিটি পোস্ট শেয়ার করা বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ রয়েছে ওই নির্দেশনামায়। সর্বভারতীয় স্তরে সমাজমাধ্যম পরিচালনার দল প্রতি দিন সাংসদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে নানা তথ্য পাঠায়। সেগুলি দিনের দিনই পোস্ট করতে হবে। প্রতিদিন যা যা পোস্ট করা হবে তাতে ভারসাম্য রাখার জন্য চারটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সাংসদদের। জাতীয় প্রসঙ্গ, সংশ্লিষ্ট সাংসদের রাজ্যের প্রসঙ্গ, এমন প্রসঙ্গ যা সাংসদের মন্ত্রক বা লোকসভা এলাকার বিষয় এবং অবশ্যই দলের জাতীয় ও রাজ্য স্তরের প্রচারকে নিয়মিত সমাজমাধ্যমের সব প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে কী কী করতে হবে তারও উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়। সাধারণ ভাবে সাংসদদের সমাজমাধ্যম পরিচালনার জন্য সহযোগী থাকেন। প্রতি সপ্তাহেই তাঁদের জানিয়ে দিতে হবে কী ধরনের বিষয় সাংসদ পোস্ট করতে চান। এই আলোচনা প্রতি সপ্তাহেই করতে হবে। সাংসদের নির্বাচনী ক্ষেত্রের জন্য কী ধরনের বিষয়বস্তু প্রয়োজন তা সেই আলোচনায় রাখা বাধ্যতামূলক। কী ধরনের বিষয়বস্তুকে পরবর্তী নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে। এ সব ছাড়াও সাংসদদের সমাজমাধ্যম ব্যবহার সহায়কদের নিয়ে প্রতি মাসে একটি করে বৈঠকের আগাম পরিকল্পনা করে নিতে হবে বলেও নির্দেশ।