কর্মসমিতির বৈঠকে দু’টি প্রস্তাব এনেছে রাজ্য বিজেপি। — নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সরকারের আমলে বাংলা অর্থনৈতিক দিক থেকে ‘পিছিয়ে পড়ছে’। এমনই অভিযোগ তুলে প্রচারে নামতে চলেছে রাজ্য বিজেপি। আর সেই প্রচারে কী কী বলা হবে, তা দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত অর্থনৈতিক প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রস্তাবে রাজ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে, তার উল্লেখ যেমন রয়েছে, তেমনই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করেও দেখানো হয়েছে।
দলীয় সংবিধান অনুসারে বিজেপি কর্মসমিতির বৈঠকে তিনটি প্রস্তাব আনতে পারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক। শুক্র এবং শনিবার দুর্গাপুরে হয়ে যাওয়া কর্মসমিতির বৈঠকে অবশ্য কোনও সাংস্কৃতিক প্রস্তাব আনা হয়নি। রাজনৈতিক প্রস্তাবে বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয় প্রকাশ্যে আনার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই দলীয় সূত্রে খবর। আর অর্থনৈতিক প্রস্তাবে কোন কোন ক্ষেত্রে রাজ্য পিছিয়ে, তার উল্লেখে জোর দেওয়া হয়েছে।বিজেপি সূত্রে খবর, প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাথা পিছু আয়ে ২০১১ সালে বাংলা যে জায়গায় ছিল, এখনও সেখানেই রয়ে গিয়েছে। দেশের অনেক পরে জন্ম নেওয়া কয়েকটি রাজ্যের থেকেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলা। একই ভাবে দেখানো হয়েছে, ‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স’-এর হিসাবে অন্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে বাংলা। বাম আমলে ১৭টি রাজ্যের পিছনে ছিল বাংলা। এখনও সেখানেই রয়েছে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও পিছিয়ে থাকার অভিযোগ রাজ্য বিজেপির প্রস্তাবে। একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলার ৭৬ শতাংশ অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণির বই পড়তে অক্ষম।
বাংলায় অনুপ্রবেশ গেরুয়া শিবিরের অনেক পুরনো অভিযোগ। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অনুপ্রবেশের ফলে জনসংখ্যার ধর্মীয় বিন্যাসে বদল আসছে বলে বরাবর দাবি করা হয়। এ নিয়ে বাংলায় এসে সরব হতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। এ বার সেই দাবিকে আরও জোরালো ভাবে রাজনীতির ময়দানে নিয়ে আসতে চায় রাজ্য বিজেপি। দলীয় সূত্রে প্রকাশ, দুর্গাপুরে দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে আনা রাজনৈতিক প্রস্তাবে অনুপ্রবেশের বিষয়টি উল্লেখ করতে এমনটাও বলা হয়েছে যে, বিনাযুদ্ধে ভারত দখলের পরিকল্পনা চলছে বাংলার সীমান্ত এলাকায়।
দুর্গাপুরে গত শুক্রবার রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্যের সব প্রধান নেতার পাশাপাশি বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও হাজির ছিলেন। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রস্তাবে কোন কোন বিষয় রাখা হবে, তা নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এর পরে শনিবার কর্মসমিতির বর্ধিত বৈঠকে সেই প্রস্তাব পেশ হয়। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই প্রস্তাব পাশও হয়ে গিয়েছে।
দলীয় সূত্রে দাবি, অর্থনৈতিক প্রস্তাবে বাংলার গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতির দাবি করে হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্যে প্রতি ৬৮ হাজার ৬০০ জন পিছু একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে কেরলে প্রতি ১২ হাজার ৮০০ জনে একটি। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে বিজেপি শাসিত গুজরাতের কথাও। বিজেপির তথ্য অনুযায়ী, গুজরাতে প্রতি ২৪ হাজার ৭১৬ জন পিছু একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। একই সঙ্গে বিজেপির দাবি, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যের ৯১৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২২৯টি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।