মুকুল তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরই তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। —ফাইল চিত্র।
দলত্যাগী মুকুল রায়ের বিধায়কপদ খারিজ করানোর জন্য তৃণমূলের দেখানো পথ অনুসরণ করতে চলেছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিলেন মুকুল। নিকটতম প্রতিপক্ষ তৃণমূলপ্রার্থী তথা অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের জন্য বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। তার পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ তুলতে শুরু করেন, প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজের দেওয়া হলফনামায় নারদ মামলার বিষয়টি ‘গোপন’ করেছেন মুকুল। বস্তুত, সেই বিষয়ে অভিযোগ তুলে মুকুলের বিধায়কপদ খারিজের দাবিতে তারা আইনি শলাপরামর্শও শুরু করেছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। গত ১১ জুন পুত্র শুভ্রাংশুকে নিয়ে তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল। প্রত্যাশিত ভাবেই তার পর থেকে নারদ-প্রশ্ন তুলে মুকুলের বিধায়কপদ খারিজ করা নিয়ে যাবতীয় শলাপরামর্শ তথা অভিযোগ বন্ধ করে দিয়েছে শাসকদল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুকুলের বিধায়কপদ খারিজের দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই দলত্যাগবিরোধী আইন কার্যকর করতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে শুধু স্পিকারকে চিঠি দিয়েই চুপ করে বসে থাকতে নারাজ গেরুয়া শিবির। হলফনামায় তথ্য ‘গোপন’ করার যে অভিযোগ মুকুলের বিরুদ্ধে তৃণমূলে এনেছিল, এবার হুবহু সেই অভিযোগে সরব হতে চলেছে বিজেপি! বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, মুকুলের বিধায়কপদ যাতে খারিজ করা যায়, সে ব্যাপারে সব পথই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মধ্যে একটি পথ হল নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে হলফনামায় নারদ মামলার বিষয়টি অনুল্লেখিত রাখা।
বিধানসভার ভোট পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন, “নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে যিনি প্রার্থী হতে চান, তাঁর একটা হলফনামা দিতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। সেখানে উল্লেখ করতে হয়, তাঁর নামে কোনও মামলা আছে কী না। মুকুল রায় সেই হলফনামায় নারদ মামলার কথা সম্পূর্ণ গোপন করেছেন। মুকুল রায়কে কে জানিয়ে দিলেন, যে তিনি নারদ মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন?" কুণাল আরও বলেছিলেন, "সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্ররা নারদ মামলার কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তা হলে কি মুকুল রায়ের কাছে বিজেপি-র বার্তা ছিল, যে তুমি বিজেপি-তে এসেছ। তুমি নারদ মামলা থেকে ছাড় পেয়ে গেলে! না হলে সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার আগে মুকুল রায় কী করে জানতে পারলেন তিনি নারদ মামলা থেকে বাইরে? সিবিআই বলছে মুকুল রায়কে টাকা নিতে দেখা যায়নি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। ফিরহাদ হাকিমকেও তো হাত পেতে টাকা নিতে দেখা যায়নি। তিনি বলেছেন, ক্লাবের ছেলেদের দিয়ে দিন। তা হলে কেন মুকুল রায় বিজেপি-র কোলে বসে দোল খাচ্ছেন। আর ফিরহাদ হাকিম প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন?”
ঘটনাচক্রে, এখন মুকুলের বিধায়কপদ খারিজ নিয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে নিজেদের দাবির ক্ষেত্রে কুণালের ওই বক্তব্যকে হাতিয়ার করতে চলেছে বিজেপি। সরাসরি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা সোমবার বলেন, ‘‘মুকুল রায়ের বিধায়কপদ খারিজের ক্ষেত্রে যে সব বিষয়গুলি উঠে আসছে, তার সবকিছু দেখভাল করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যথাসময়ে সবকিছু জানানো হবে।" প্রসঙ্গত, বিরোধী দলনেতা হিসেবে দলের তরফে শুভেন্দুই মুকুল সংক্রান্ত অভিযোগ স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দলত্যাগবিরোধী আইনের বলে মুকুলের বিধায়কপদ খারিজ করিয়েই চাড়বেন। প্রয়োজনে আদালতেও যেতে রাজি তাঁরা।