অনুব্রত চ্যালেঞ্জ নিতেই অশান্ত পাড়ুই

ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরানো নিয়ে তাঁর চ্যালেঞ্জে অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন বিরোধীরা। তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সেই ঘোষণার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই আরও এক বার উত্তপ্ত হয়ে উঠল পাড়ুই! হাঁসড়ায় অনুব্রত তাঁর ‘সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সভা’ যেখানে করেছিলেন, তার ঠিক লাগোয়া এলাকা গোরাপাড়ায় দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজিকে কেন্দ্র করে ফের নতুন করে অশান্তি ছড়াল পাড়ুই থানা এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়ুই শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

বাড়ির চালা ভেঙে পড়েছে বোমা।

ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরানো নিয়ে তাঁর চ্যালেঞ্জে অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন বিরোধীরা। তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সেই ঘোষণার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই আরও এক বার উত্তপ্ত হয়ে উঠল পাড়ুই!
হাঁসড়ায় অনুব্রত তাঁর ‘সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সভা’ যেখানে করেছিলেন, তার ঠিক লাগোয়া এলাকা গোরাপাড়ায় দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজিকে কেন্দ্র করে ফের নতুন করে অশান্তি ছড়াল পাড়ুই থানা এলাকায়। সোমবারের ওই ঘটনায় অবশ্য কেউ হতাহত হয়নি। তবে, গণ্ডগোলের আশঙ্কায় এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী, র‍্যাফ ও কমব্যাট বাহিনী মোতায়েন করেছে জেলা পুলিশ। সিআই (‌বোলপুর) চন্দ্রশেখর দাসের নেতৃত্বে দু’টি থানার (সাঁইথিয়া ও পাড়ুই) ওসি এ দিন এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছেন। পুলিশের দাবি, গোরাপাড়া গ্রামের একাধিক জায়গা থেকে শতাধিক বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় ওই গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ পিকেটও বসানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, হাঁসড়ার জনসভার পরে লাগোয়া গোরাপাড়া এলাকায় দলীয় পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতেই উভয়দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বচসা বেঁধেছিল। জানা গিয়েছে, গ্রামের পশ্চিমপাড়া তৃণমূল অধ্যুষিত।লাগোয়া পূর্বপাড়ায় আবার বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বাড়ি রয়েছে। বচসার খবর পেয়ে, বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায় রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ গোরাপাড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া সংলগ্ন কেন্দ্রডাঙাল-হাঁসড়া রাস্তার উপর তৃণমূলের কয়েক জন পূর্বপাড়ার দিকে প্রথমে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। তার পাল্টা হিসেবে পূর্বপাড়া থেকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও পশ্চিমপাড়ার দিকে বোমা ছোড়ে বলে তৃণমূলের দাবি। উভয় পক্ষের মধ্যে বোমাবাজির খবর লাগোয়া পুলিশ ক্যাম্পে যেতেই র‍্যাফ, কমব্যাট-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় চলে আসে। তারা দু’দলের কর্মী-সমর্থকদেরই এলাকা থেকে হঠিয়ে দেয়।

Advertisement

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, কেন্দ্রডাঙাল-হাঁসড়া রাস্তার উপর গোরাপাড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া এবং পূর্বপাড়ার সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় বেশ কিছু বোমার দাগ তখনও স্পষ্ট। পশ্চিমপাড়া লাগোয়া তৃণমূলের অস্থায়ী কার্যালয়ে দেখা মিলল তৃণমূলের কর্মী শেখ আবু হোসেন, শেখ আনওয়ার হোসেন, দিলবাহার হোসেন, নুর আলমদের। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পূর্বপাড়ার বিজেপি-র দুষ্কৃতী কাসেম মোল্লা, জাহিদ হোসেন, আজিজুল হকের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা আমাদের পাড়ায় বোমাবাজি করেছে। হাঁসড়ায় তৃণমূলের সভায় যাওয়ার আক্রোশেই ওরা বোমাবাজি করেছে।’’ তাঁদের আরও দাবি, বোমাবাজির জেরে পশ্চিমপাড়ার হৃদরোগী এক বাসিন্দা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেনের অভিযোগ, “বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ফের সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করছে। বোমাবাজি করে ওরা তারই প্রমাণ দিয়েছে।’’

উঠোনে পড়ে থাকা গুলির খোল দেখাচ্ছেন বাসিন্দা। বড় শিমুলিয়ায়।

Advertisement

যদিও এর উল্টো চিত্রই উঠে আসছে বিজেপি সমর্থক পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে। গোরাপাড়ার বাসিন্দা বিজেপি কর্মী কাসেম মোল্লা, হাবিবুর রহমান, শাহিদ হোসেনরা অভিযোগ এ দিন করেন, ‘‘সকালে তৃণমূলের কর্মী দিলবাহার হোসেন, নুর আলাম শেখ, আবু হোসেনদের নেতৃত্বে দুষ্কৃতী বাহিনী এলাকায় প্রথমে বোমাবাজি করে। পূর্বপাড়ার দিকে ওরা বোমা ছোড়ে। আমরাই লাগোয়া মাখড়া এবং হাঁসড়া পুলিশ ক্যাম্পে খবর পাঠাই। পুলিশ এসে ওদের এলাকা থেকেই একাধিক ড্রামে ভর্তি শতাধিক বোমা উদ্ধার করেছে।’’ তাঁদের দাবি, অনুব্রতর জনসভার পরে ‘চাঙ্গা’ হয়েই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালানোর জন্য রবিবার রাত থেকে হুমকি দিচ্ছিল। সোমবারের ঘটনা তারই পরিণতি। বিজেপি-র পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি শেখ সামাদের অভিযোগ, ‘‘শান্ত এলাকাকে অশান্ত করার জন্য তৃণমূল বহিরাগত দুষ্কৃতীদের লেলিয়ে দিচ্ছে। তারাই এলাকায় থলে থলে বোমা-বারুদ নিয়ে তাণ্ডব করছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত।’’ তাঁ দাবি, ‘সন্ত্রাস বিরোধী শান্তির পক্ষে’ জনসভার নামে তৃণমূল নেতৃত্ব এলাকায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

গোটা বিষয়টি দু’পক্ষই পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন। য দিও এ দিনের ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনও পক্ষই এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। ধরাও পড়েনি কেউ।

বোমা-গুলি বড় শিমুলিয়াতেও

নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর

এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং বোমাবাজির জেরে ফের তেতে উঠল বোলপুর থানার বড় শিমুলিয়া। রাজ্যের শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা, এক সপ্তাহের মধ্যে এটি দ্বিতীয়বার।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় রানা শেখ নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। জখম ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে এবং পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে হয়েছে। রানা নানুর থানার পাপুড়ির বাসিন্দা এবং এলাকায় কাজল শেখের গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। তাঁর মাথায়, শরীরে একাধিক চোট রয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান লাঠি এবং রড দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে, বোলপুর থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। শুরু হয়েছে পুলিশের নজরদারি এবং তল্লাশি অভিযান। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগ জানায়নি।

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement