গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি। রামনাথ কোবিন্দ এবং অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের পরিস্থিতি জানাবেন দলের নেতারা। শুধু পরিস্থিতি অবগত করানোই নয়, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপও দাবি করা হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। সেই উদ্দেশেই আগামী ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামিকাল শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না কর্মসূচি রয়েছে বিজেপির। রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন, ওই কর্মসূচির পরেই তা ঘোষণা করা হবে বলে মুরলী ধর লেন সূ্ত্রে খবর। এ ছাড়া নবান্ন অভিযানের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে শনিবার।
মঙ্গলবারই মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে খুন হয়েছেন একই পরিবারের তিন জন— বন্ধুপ্রকাশ পাল (৪০), তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) ও পুত্র অঙ্গন (৫)। বন্ধুপ্রকাশ আরএসএস-এর সদস্য ছিলেন। শুধু জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নয়, নদিয়ায় সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বিজেপি কর্মী (পেশায় পুরোহিত) খুন হয়েছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ তুলে ধরেছে বিজেপি। গেরুয়া ব্রিগেডের অভিযোগ, শুধু বন্ধুপ্রকাশ ও তাঁর পরিবার বা নদিয়ার পুরোহিত নন, রাজ্য জুড়ে গত চার দিনে আট জন বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন। তাদের দাবি, পুলিশ কার্যত হাত গুটিয়ে বসে। কখনও রাজনৈতিক খুনকেও পারিবারিক বা সম্পত্তিগত বিবাদ হিসেবে দেখাতে চাইছে। দলের নেতাদের মতে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাই কার্যত ভেঙে পড়েছে।
আরও পডু়ন: চেন্নাইয়ে চিনা প্রেসিডেন্টকে রাজকীয় অভ্যর্থনা, মোদী-চিনফিং বৈঠক ঘিরে বাড়ছে আগ্রহ
এই আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নেই রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘রাজ্যপালের মতে, এই ঘটনার তীব্রতা এমনই যে, তাতে বিবেক কেঁপে উঠেছে। এই ঘটনা অসহিষ্ণুতা এবং ভয়ঙ্কর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিফলন।’’ এই বিবৃতির কিছুক্ষণ পরেই পাল্টা আক্রমণ শানান তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে থেকে রাজনৈতিক মন্তব্য করে নিজের এক্তিয়ার লঙ্ঘন করেছেন রাজ্যপাল।’’
অন্য দিকে,রাজ্যবিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘একের পর এক রাজনৈতিক খুন হচ্ছে। তা রুখতে পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কিন্তু পুলিশ বারবারই নিজের দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। খুন হলেই পুলিশ আগেভাগে বলে সম্পত্তি বা পারিবারিক বা টাকাপয়সা ধার নিয়েছিল। এগুলো সবই ভিত্তিহীন। পরে আদালতে গিয়ে এগুলো ধোপে টেকে না। কিন্তু পুলিশ এ রাজ্যে বার বার এই ভিত্তিহীন কথাগুলোই বলে চলে।’’
আরও পডু়ন: জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ রাজ্যপালের, কড়া বিবৃতি রাজভবনের, পাল্টা আক্রমণে পার্থ
এই রাজনৈতিক চাপানউতরের আবহেই এ বার দিল্লি দরবারে বিজেপি। রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে পারে না। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছি। সে জন্যই রাষ্ট্রপতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।’’ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এই ইস্যুতে রাজ্যপালের সঙ্গেও দেখা করবে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল।