—ফাইল চিত্র।
দেশজোড়া গাঁধী স্মরণে নামছে বিজেপি। তার অঙ্গ হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গে ১২ দিনের ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’ ঘোষণা করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সাড়ে ছ’হাজার কিলোমিটার পদযাত্রায় অংশ নিতে বলা হয়েছে দলের সব সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যকে। লোকসভা নির্বাচনে যে প্রার্থীরা জিততে পারেননি, তাঁদেরও নামতে বলা হয়েছে পদযাত্রায়। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হারা আসনগুলোর মধ্যে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবারের উপরে। দুই রাজ্যসভা সাংসদকে নামানো হচ্ছে ওই দুই এলাকায়।
রাজ্য জুড়ে ‘রথযাত্রা’ বার করার পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল গত বছর। কিন্তু লোকসভা ভোটে গোটা বাংলায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার পরে বেশ খানিকটা বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। তাই ফের ‘যাত্রা’য় বেরনোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল বঙ্গ বিজেপিতে। ২০১৮ সালে যে ‘রথযাত্রা’ তথা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’য় বেরনোর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, এ বার অবশ্য সে যাত্রা নয়। মহাত্মা গাঁধীর সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সব রাজ্যেই বিজেপি ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’ বার করেছে বলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ রবিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে সেই যাত্রা ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন দিলীপ।
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘গাঁধীজির জীবন এবং তাঁর শিক্ষাকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই যাত্রা বার করা হচ্ছে।’’ স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মতো যে সব কর্মসূচি ভারত সরকার গ্রহণ করেছে গাঁধীজির ভাবনা দ্বারা প্রেরিত হয়ে, সে সবও তুলে ধরা হবে।
আরও পড়ুন: নবান্ন অভিযানের হুমকি দিলীপের
এ রাজ্যে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রেই আলাদা আলাদা করে যাত্রা বার করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। প্রত্যেকটি লোকসভা কেন্দ্রে অন্তত ১৫০ কিলোমিটার পদযাত্রা করবেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। রোজ ১৫ কিলোমিটার করে পদযাত্রা হবে। এই সব পদযাত্রা যে সব অঞ্চলকে ছুঁয়ে যাবে না, সেই সব এলাকা থেকে ছোট ছোট ‘উপযাত্রা’ এসে মূল পদযাত্রাগুলিতে যোগ দেবে, পরিকল্পনা এমনই। পদযাত্রায় ট্যাবলো থাকবে। পদযাত্রার ফাঁকে ফাঁকে সভা করার পরিকল্পনাও হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুই পুলিশ জাপ্টে ধরলেন সৌভিককে
কারা নেতৃত্ব দেবেন এই পদযাত্রাগুলিতে? দিলীপ জানিয়েছেন, ১৮ জন সাংসদ নিজের নিজের এলাকায় যাত্রার নেতৃত্ব দেবেন। লোকসভা নির্বাচনে যে প্রার্থীরা হেরে গিয়েছেন, তাঁরাও নিজেদের আসনগুলিতে পদযাত্রায় অংশ নেবেন। তবে যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবারের দায়িত্বে কিন্তু ওই দুই আসনে হেরে যাওয়া বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা এবং নীলাঞ্জন রায় থাকছেন না। যাদবপুরে ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং ডায়মন্ড হারবারে আর এক রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
এই দুই লোকসভা কেন্দ্রের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত কেন? বিজেপির তরফ থেকে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। কর্মসূচির সংযোজক জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ‘‘লোকসভার সাংসদদেরকে তাঁদের নিজের নিজের এলাকার দায়িত্ব দিয়ে দেওয়ার পরে আর দু’জন সাংসদ আমাদের হাতে অতিরিক্ত ছিলেন। তাঁদেরকে কোন কোন এলাকায় পাঠানো হবে? ঠিক হয়েছে, যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবারে পাঠানো হবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জয়প্রকাশের সংযোজন, ‘‘কেন ওই দুই আসনে পাঠানো হল, বোঝার চেষ্টা করুন।’’
আরও পড়ুন: ভাতা নেই, অবসরের পর পথের ভিখারি স্বাস্থ্যকর্মীরা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার। সেখানে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার গুরুত্ব সব সময়েই আলাদা। আর অভিষেককে যে জমি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না, সে বার্তা দেওয়াটাও জরুরি। তাই ওই কেন্দ্রের বিজেপির হয়ে লড়া অনামী নীলাঞ্জন রায়ের বদলে সেলিব্রিটি রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ভাল পছন্দ বলে মনে করেছেন বিজেপি নেতারা। আর স্বপন দাশগুপ্তের মতো হেভিওয়েট সাংসদ তথা বাঙালি বিশিষ্টজনকে যাদবপুরের দায়িত্ব দিয়ে বিজেপি আসলে কলকাতার বাঙালিদের মধ্যে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
পরিকল্পনা সারা। কোথায় কবে পদযাত্রা, কোথায় কবে সভা, সে বিষয়ে পুলিশকে সবই জানিয়ে রাখা হবে বলে দিলীপ ঘোষ এ দিন জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশকে জানিয়ে রাখলেই কি সবটা মসৃণ ভাবে হবে? অনুমতি কি মিলবে? নাকি ‘রথযাত্রা’র মতো এটাও আটকে দেওয়ার চেষ্টা হবে? রাজ্য বিজেপির সভাপতি বলেন, ‘‘এটা তো গাঁধীজির স্মরণে একটা পদযাত্রা। এটাতে রাজ্য সরকার বাধা দেবে বলে আমাদের মনে হয় না। তবে বাধা যদি দেয়, তা হলে যা করার আমরা করব।’’