ঝাড়গ্রামের বিজেপির কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল যাঁকে প্রচারের মুখ করতে চাইছে সেই ছত্রধর মাহাতোকেই আক্রমণের নিশানা করতে চায় বিজেপি।
রবিবার ঝাড়গ্রামে জেলা বিজেপি-র নেতাদের নিয়ে দলীয় বৈঠক করে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধরের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যের দলীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সঙ্গে ছিলেন দলের নেতা মুকুল রায়ও। এদিন দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরে বিজেপি-র জেলা কার্যালয়ে জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী, জেলার পর্যবেক্ষক সুজিত অগস্তি, সাংসদ কুনার হেমব্রম, জেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদাধিকারী ও ১৮টি মণ্ডলের সভাপতিদের নিয়ে দলীয় বৈঠক করেন কৈলাস। গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, বৈঠকে কৈলাস স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিহারের সঙ্গে এ রাজ্যেরও বিধানসভা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তৃণমূলের প্রচারের মুখ ছত্রধরকে নিশানা করে আক্রমণের সুর চড়াতে হবে। ছত্রধরের উপস্থিতিতে বিজেপি-র লোকজন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করে বৈঠকে রাজ্যের পর্যবেক্ষক জানিয়ে দেন, পুলিশ প্রশাসনের যে অংশ শাসকদলের হয়ে কাজ করছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে রাখতে হবে। ছ’মাস পরে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরছে বলে জোরালো প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মনে আস্থা জাগাতে হবে।
এ দিন বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের কৈলাস বলেন, ‘‘ছত্রধরকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন মমতা। পুলিশের খাতায় অপরাধী ছত্রধর এখন পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস করে, ভয় দেখিয়ে বিজেপি-র লোকজনকে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করছেন।’’ মমতাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কৈলাসের মন্তব্য, ‘‘আমরা সর্বভারতীয় দল, কোনও প্রদেশের দল নই। ফলে আমাদের দমানো যাবে না।’’ ঘটনাচক্রে ছত্রধর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো মামলায় নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে এ কাজ হচ্ছে। এ অভিযোগের সরাসরি জবাব না দিয়ে কৈলাস বলেন, ‘‘ছত্রধর ভয় দেখিয়ে বিজেপি-র লোকজনে তৃণমূলে যোগ দেওয়াচ্ছেন এটা তো দাদাগিরি!’’ এ দিন জেলা সিপিএম কার্যালয়ে দলীয় বৈঠকের পরে ছত্রধরের নাম না করে বিমান বসু জানান, মাওবাদীদের সঙ্গে যাঁর সম্পর্ক ছিল তিনি এখন তৃণমূলে। ওই পোস্টার তাদের দেওয়া কি-না জানি না।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘ছত্রধর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বিজেপি ও বামেরা দিশেহারা হয়ে এখন পাগলের প্রলাপ বকছেন।’’ আর যাঁকে নিয়ে চাপানউতোর সেই ছত্রধরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাম ও বিজেপি গাঁটছড়া বেঁধে কুৎসা শুরু করেছে। বাম আমলে আমি মানুষের দাবি নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। এখন তৃণমূলে রাজ্য সম্পাদক হিসেবে এলাকায় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য কাজ করছি।’’
কৈলাস জানিয়ে দেন, বিহারের সঙ্গে বাংলার ভোট হওয়া উচিত। বেলপাহাড়ি এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার-কাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মকুল বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের সেই অর্থে উন্নয়ন হয়নি। বেকারদের কাজ নেই। পোস্টার দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপিকে মিথ্যা অভিযুক্ত করা হচ্ছে।’’