বাঁ দিকে, পুড়ে যাওয়া বিজেপি অফিস। ডান দিকে, প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ দলের নেতা-কর্মীদের। বুধবার আসানসোলে। ছবি: শৈলেন সরকার।
তাঁদের হাতে ছিল বিজেপির পতাকা। নিজেদের বিজেপি সমর্থক বলে দাবিও করেছেন তাঁরা। কিন্তু, বুধবার আসানসোলে যাঁরা কার্যালয়ে আগুন লাগালেন তাঁদের নিজেদের কর্মী বলে মানতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের সাফ বক্তব্য, দলের কর্মীরা কখনও এ ভাবে নিজেদের অফিসে আগুন লাগাতে পারেন না। এর পিছনে তৃণমূলের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। গোটা ঘটনাটিকে যদিও বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের নেতারা।
আরপিএফ উচ্ছেদ করে দেওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়ছেন, এই অভিযোগে আসানসোল স্টেশনের হকারেরা বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ-আন্দোলন করছেন। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে জনা পঞ্চাশের একটি মিছিল বেরোয়। নিজেদের বিজেপি সমর্থক হকার বলে দাবি করেন তাঁরা। স্টেশন রোড ধরে এক কিলোমিটার গিয়ে আসানসোল বাজারে জিটি রোড লাগোয়া বিজেপির একটি অফিসের সামনে পৌঁছয় মিছিলটি। সেখানে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন ওই হকারেরা। তাঁদের দাবি, আরপিএফের জুলুমের অভিযোগ ও পুনর্বাসনের দাবি সাংসদকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।
এর পরেই তাঁরা বিজেপির অফিসটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। বাজার এলাকায় এ ভাবে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের বাসিন্দারাই প্রথমে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খানিক ক্ষণের মধ্যে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলে। আসানসোল দক্ষিণ থানা থেকে পুলিশের বড় বাহিনী আসে। পৌঁছন কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ।
দলের কার্যালয়ে আগুন লাগানোর খবর পেয়েই বিজেপি নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হন। তত ক্ষণে অবশ্য ওই হকারেরা এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে জিটি রোড অবরোধ শুরু করেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। কিছুক্ষণ পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবশ্য অবরোধ উঠে যায়।
বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার দাবি করেন, ‘‘যারা সাংসদের কুশপুতুল ও আমাদের অফিস জ্বালিয়েছে তাদের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপির পতাকা কিনে এনে দুষ্কৃতীরা এ সব করেছে। এর পিছনে তৃণমূলের মদত রয়েছে। আমরা দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ তিনি অভিযোগ করেন, আসানসোলে সামনে পুরভোট রয়েছে। তাই রাজনৈতিক চক্রান্তেই এ সব হচ্ছে। বিজেপির আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীও দাবি করেন, দলের কিছু কর্মী-সমর্থক কোনও কর্মসূচি নিলে সেই খবর দলীয় নেতৃত্বের কাছে থাকে। কিন্তু এ দিন হকারদের কর্মসূচির কোনও খবর দলের কাছে ছিল না।
মিছিলে যোগ দেওয়া হকারের অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা সকলেই বিজেপির হকার্স ইউনিয়নের কর্মী। তাঁদের দাবি, মাস ছয়েক আগে বিজেপি নেতাদের উপস্থিতিতেই এই সংগঠন তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভকারী হকারদের তরফে সিধু বর্মন বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের নাম ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চা। আমরা সবাই সক্রিয় কর্মী।’’ তাঁরা জানান, আসানসোলে অনেক হকারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম, স্টেশন চত্বর বা ট্রেনে হকারদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা এর সমাধানের আর্জি নিয়ে বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের কথার গুরুত্ব দেননি।’’ সেই হতাশা থেকেই এ দিনের বিক্ষোভ-কর্মসূচি নেওয়া হয় বলে তাঁদের দাবি।
বাবুল অবশ্য বলেন, ‘‘হকারদের সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নিয়মানুবর্তিতা আছে। এই সমস্যা নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আসানসোলের ডিআরএমের সঙ্গেও কথা বলেছি। প্রস্তাব দিয়েছি, কী ভাবে হকারদের পুনর্বাসন দেওয়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, সব কিছুরই একটি নিয়ম আছে। নিয়মানুবর্তিতা আছে।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘কুশপুতুল দাহ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।’’ যাঁরা এই কাজ করেছেন তাঁরা বিজেপির কেউ হতে পারেন না বলে দাবি বাবুলেরও। তাঁর মতে, কোনও বিষয়ে মতভেদ হতেই পারে। কিন্তু একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মীরা কখনও দলের অফিস পোড়াবেন না।
বিজেপি অফিসে আগুন লাগানোর পিছনে তাদের মদতের কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আসানসোল উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক ও তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওরা হতাশা থেকে এই সব বলছে। আসানসোলে তৃণমূলের এমন অবস্থা হয়নি যে বিজেপির অফিস পোড়াতে হবে।’’ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘পুনর্বাসন না দিয়ে হকারদের উচ্ছেদ করা ঠিক নয়। তাঁদেরও ঘর-সংসার, পরিবার আছে। তাঁদের নিয়ে ভাবতে হবে। তবে আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক কার্যালয় পোড়ানো ঠিক নয়। আমরা এর নিন্দা করছি।’’