ফাইল চিত্র।
রাজ্যে মদ সস্তা হচ্ছে কিন্তু পেট্রল, ডিজ়েলের দামে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না কেন, এই প্রশ্নে বিতর্ক এবং হট্টগোলের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল বিধানসভার অধিবেশন। এই প্রশ্নে মুলতুবি প্রস্তাবের উপরে আলোচনার সুযোগ না পেয়ে ওয়াক-আউট এবং বিক্ষোভ করলেন বিরোধী বিজেপি বিধায়কেরা।
বস্তুত, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শেষ করে দেওয়া হল এক দিন আগেই। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল আজ, বৃহস্পতিবার। পেট্টো-পণ্যের মূল্যের উপরে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বিধানসভা চালিয়ে যাওয়ার মতো কার্যসূচি হাতে নেই, এই কারণ দেখিয়ে অধিবেশনে দাঁড়ি টেনে দেওয়া হয়েছে বুধবারই। বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজ়েলে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পরে প্রায় ২৬টি রাজ্য তেলে নিজেদের করের ভাগ কমিয়ে মানুষকে একটু স্বস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার সেই পথে হাঁটেনি। এই নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ার হাত থেকে বাঁচার জন্যই এক দিন আগে অধিবেশন শেষ করে দেওয়া হল!
সরকার পক্ষ অবশ্য বিরোধীদের এমন দাবি খারিজ করে দিয়েছে। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘পেট্রল, ডিজ়েলের দাম নিয়ে প্রস্তাব আসেনি, কে বলল! আমরা তো প্রস্তাব ফেলেছিলাম। কিন্তু অন্য আর কোনও বিষয় নেই। কিন্তু সময় নেই। একটা প্রস্তাব দিয়ে অধিবেশন চালানো যায় না। তাই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’’ পার্থবাবুর আরও যুক্তি, ‘‘কয়েকটা বিল আনা যাবে, ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো তৈরি হয়নি। প্রতি দিন চালিয়ে তো গেলাম একটা না একটা প্রস্তাব বা কিছু দিয়ে! বিল নেই বলেই এটা করতে হল। কয়েকটা দিন সময় পেলে হয়তো কিছু বিল আসতো।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা বিরোধীদের, বিধানসভা জনগণের জন্য। কিন্তু এখানে শাসক দল কথায় কথায় বলছেন আমরা সংখ্যায় দু’শোর বেশি। বিরোধীদের কথাই বলতে দেওয়া হচ্ছে না!’’ পেট্রো-পণ্য প্রসঙ্গেও তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার নিত্য নতুন মদ এনে এবং দাম কমিয়ে সমাজকে বিপথে চালিত করছে। বিজেপির মহিলা বিধায়কেরা প্রস্তাব এনেছিলেন বিধানসভা মুলতুবির। কিন্তু আলোচনা হয়নি। সরকার পক্ষ সঠিক উত্তরও দেয়নি।’’ বিধানসভার বাইরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মদের দাম কমানো হচ্ছে। মদ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়, তাই সেখানে রাজ্য আয় কমাতে পারে। আর পেট্রল, ডিজ়েল মানুষের তত প্রয়োজনে লাগে না, তাই সেখানে ভ্যাট কমানো যাবে না। সেখানে রাজ্য লুঠ করবে! হাস্যকর একটা চেহারা দেখা যাচ্ছে সরকারের!’’
বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন, মঙ্গলবারই শুধু বিএসএফের পরিসর বাড়ানোর বিরুদ্ধে সরকারি প্রস্তাবের উপরে আলোচনা হয়েছিল বিধানসভায়। পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমানো নিয়ে এক দিন আলোচনা করতেই বা কী অসুবিধা ছিল?
বিধানসভায় এ দিন তিনটি মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি। অগ্নিমিত্রা পালের আনা প্রস্তাবে বলা হয়, পেট্রল-ডিজ়েলের ভ্যাট কমানো হচ্ছে না অথচ মদের দাম ২৫% কমে গিয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা দাবি করেন অগ্নিমিত্রারা। বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের আনা প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ভাতা নয়, চাকরি চাই। রাজ্যে কর্মসংস্থান হচ্ছে না, অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের (ওবিসি) চাকরির কোটা থেকে কেটে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে কাজ দেওয়া হচ্ছে। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের আনা মুলতুবি প্রস্তাবে ভোট-পরবর্তী হিংসার কথা বলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চাওয়া হয়েছিল। স্পিকার প্রস্তাব পাঠ করতে দিলেও কোনওটি নিয়েই আলোচনার অনুমতি দেননি। প্রথমে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভের পরে বিজেপি বিধায়কেরা বিধানসভার পোর্টিকোয় কিছু ক্ষণ শরীরে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে অবস্থানে বসেন। সভার বাইরে শুভেন্দু জানান, উত্তরবঙ্গের চা-বাগান সংক্রান্ত সমস্যা নিয়েও বিজেপি পরিষদীয় দল কর্মসূচি নেবে। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এক বিষয়ের সঙ্গে অন্য বিষয় জড়িয়ে মুলতুবি প্রস্তাবের নিয়মও মানেনি বিজেপি।