অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র
প্রথমে ঠিক ছিল বুধবার, পরে তা পাল্টে হয় বৃহস্পতিবার— কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপাতত বাংলার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন না নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকটি কবে হবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। রামপুরহাট-কাণ্ডের আবহে বৈঠকটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হত। বঙ্গের বিজেপি সাংসদদের পরিকল্পনা ছিল, বৈঠকে বাংলার রাজনৈতিক হিংসার ছবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা। কিন্তু বৈঠক বাতিল হওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্নের মুখে বাংলার বিজেপি সাংসদেরা। মুখ বাঁচাতে তাঁদের যুক্তি, বঙ্গের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁরা মোদীর কাছে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানাতেন। সেই বৈঠক না হওয়ায়, দলের সভাপতি জে পি নড্ডার কাছে আজ জমা দেওয়া রিপোর্টে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে রামপুরহাটের ঘটনায় বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ভূমিকা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যা থেকে তৃণমূলের আশঙ্কা, বিজেপি এ বার নিশানা করেছে দলনেত্রী তথা বাংলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কেষ্ট’কে।
ওই রিপোর্টে প্রথমত, প্রশ্ন তোলা হয়েছে, রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের ঘটনার পরে বিষয়টি চাপা দেওয়ার জন্য অনুব্রত সেটিকে টিভি বিস্ফোরণ বলে লঘু করার চেষ্টা করেছিলেন কেন? দ্বিতীয়ত, কয়লা ও খনিজ সমৃদ্ধ বীরভূমে কী ভাবে তৃণমূল নেতারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই তোলাবাজি ও বখরা তুলে চলেছেন, তা নিয়েও ইডি-র তদন্তের দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। যে ভাবে রিপোর্টে অনুব্রতকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে আগামী দিনে ওই নেতার গ্রেফতারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মমতা। আজ উত্তরবঙ্গ সফরকালে মমতা বলেন, ‘‘এ ধরনের রিপোর্ট মূল তদন্তকে প্রভাবিত করে।’’ গোটা রিপোর্টটিই আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগে, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ওই রিপোর্ট বানানো হয়েছে। আমি কেন্দ্র তথা বিজেপির ওই উদ্যোগের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যখন তদন্ত চলছে, তখন সেখানে কোনও দলের হ্স্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কিন্তু বিজেপি যা করেছে তা ক্ষমতার অপব্যবহার। বিজেপি কি মনে করছে দেশে কেবল ওরাই থাকবে?’’ তৃণমূল শিবিরের মতে, এখন পর্যন্ত অনুব্রতকে নিয়ে এই কাণ্ডে সিবিআই টানাটানি শুরু করেনি। কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যদি টাকার লেনদেন, সিন্ডিকেটের সম্পর্ক বেরিয়ে আসে, তা হলে অস্বস্তি বাড়তে চলেছে অনুব্রতের। বিশেষ করে রিপোর্টে যে ভাবে ইডি-কে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেপি তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
অনুব্রতকে গ্রেফতারের যে আশঙ্কা মমতা করেছেন তা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আজ বলেন, ‘‘মৃতের পরিবার জানিয়েছে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে গন্ডগোল ছিল। এবং সেই টাকার ভাগ অনুব্রতের কাছে যেত। আমরা যা জেনেছি তাই রিপোর্টে জানিয়েছি।’’ বিজেপির দাবি, রিপোর্টে কোথাও অনুব্রতকে গ্রেফতারের সুপারিশ করা হয়নি। যে ভাবে ঘটনার পরে বিষয়টি শর্টসার্কিটের ফলে টিভি-বিস্ফোরণ বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তা সন্দেহ তৈরি করে। যা দেখে মনে হচ্ছে, তৃণমূলের ওই নেতা কোনও না কোনও ভাবে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
রামপুরহাট-কাণ্ডের অন্যতম কারণ কাটমানি বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ভাদু শেখ তাঁর ডান হাতকে তোলা ও বখরার ভাগ দেননি। সে কারণেই প্রথমে ভাদু খুন হন। তার জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। রাজ্যে ধারাবাহিক হিংসা রুখতে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন সুকান্তেরা। কিন্তু কেন্দ্র ৩৫৫ না ৩৫৬— কোন ধারায় হস্তক্ষেপ করবে, তা কেন্দ্রের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। বিজেপি সূত্রের মতে, ওই রিপোর্টটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন নড্ডা। সুকান্ত বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ঠিক করবে রাজ্যের জন্য কোন ধারা সঠিক হবে। তবে আমাদের দাবি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ।’’