ED attacked in West Bengal

অগ্নিগর্ভ সন্দেশখালি! শাহি দফতরে সুকান্তের রিপোর্ট, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্বেগও লিখলেন চিঠিতে

ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই এক্স হ্যান্ডলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে কড়া পদক্ষেপ আর্জি জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৪
Share:

অমিত শাহকে রাজ্য বিজেপি চিঠি দিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য উল্লেখ করে। —ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালিতে রক্তাক্ত হয়েছেন ইডি আধিকারিকেরা। ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপ চাইছে রাজ্য বিজেপি। এএনআই তদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠিও দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

Advertisement

ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই এক্স হ্যান্ডলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে কড়া পদক্ষেপ আর্জি জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিষয়টি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং ইডির অধিকর্তা ও সিআরপিএফ-এর নজরেও আনেন এক্স হ্যান্ডলের পোস্টের মাধ্যমে। সন্দেশখালির ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তাঁর কথায়, “সন্দেশখালির এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনও রাজ্যে যখন কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতের নির্দেশে তদন্তের জন্য বিভিন্ন স্থানে যায়, সেই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব সেই রাজ্যের সরকারের। কিন্তু আমরা বার বারই দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থার উপর আক্রমণ হয়েছে। এই আক্রমণ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপরে নয়, এই আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আক্রমণ। আজ যাঁদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।” এ বার সরাসরি শাহের দ্বারস্থ হল রাজ্য বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সন্দেশখালিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবিও জানানো হয়েছে চিঠিতে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় পাঁচ ইডি আধিকারিকের একটি দল। সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীও ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়ির দিকে তাঁরা যাওয়ার চেষ্টা করলেই রুখে দাঁড়ান গ্রামবাসীদের একাংশ। যাঁরা শাহজাহানের অনুগামী বলে দাবি। ইডি আধিকারিকেরা তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। এর পরেই তাঁরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, সেই সময়েই তাঁদের ঘিরে ফেলে মারধর করা হয়। ধাক্কা গিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও। শেষমেশ ধাওয়া করে ইডি আধিকারিকদের এলাকাছাড়া করা হয়। ভাঙচুর করা হয় তাঁদের গাড়িতে। সেই সময়েই তিন আধিকারিক জখম হয়েছেন বলে খবর। ইডি সূত্রে খবর, সন্দেশখালিতে যে তিন আধিকারিক জখম হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন সহকারী ডিরেক্টর রাজকুমার রাম। তিনি বাইরে থেকে এসেছিলেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে তাঁর সিটি স্ক্যান করানো হবে। জখম হওয়া বাকি দুই আধিকারিকের নাম অঙ্কুর এবং সোমনাথ দত্ত। অভিযোগ, আক্রান্ত হয়েছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। তাঁদের গাড়ি ও ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে বলে দাবি। প্রেস ক্লাবের তরফেও এর তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।

Advertisement

প্রেস ক্লাবের বিবৃতি।

ইডির তল্লাশি অভিযানে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যে ‘সাংবিধানিক পরিকাঠামো’ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপির চিঠিতে সেই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার ওই ঘটনা নিয়ে বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। তার প্রেক্ষিতে বলেন, “পুলিশ কী করছিল, পুলিশ কি ঘটনাস্থলে যায়নি?” তার পরে তিনি বলেন, “রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না, রাজ্যে সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে?” এই বিষয়ে বিচারপতির সংযোজন, “তদন্তকারী সংস্থা আক্রান্ত হলে কী ভাবে তদন্ত হবে?” চিঠিতে রাজ্য বিজেপি বিচারপতির মন্তব্য উল্লেখ করে আসলে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবির প্রেক্ষিত তৈরি করে রাখতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

উল্টো দিকে, বিচারপতির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে শাসক তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা আপত্তিকর এবং এক্তিয়ার-বহির্ভূত। বিচারপতির চেয়ারকে উনি অপমান করছেন। ওঁর উচিত চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসা। না হলে প্রধান বিচারপতির উচিত ওঁকে সতর্ক করা।” সন্দেশখালির ঘটনার প্রেক্ষিতেও তিনি বলেন, “সন্দেশখালির ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু শুধু তৃণমূলকে বেইজ্জত করবে বলে বিজেপির নির্দেশে কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তল্লাশির নামে প্ররোচনা দিচ্ছে।” এটি ধারাবাহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছেন বলেও দাবি করেন কুণাল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে ‘রেজিস্টার্ড চোর’ বলে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, “বিজেপি নেতাদের বাড়ি তল্লাশি হয় না। কিন্তু যেখানেই বিজেপি সংগঠনে পাল্লা দিতে পারছে না, সেই জায়গায় গিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করা হচ্ছে, গন্ডগোল তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।” সন্দেশখালির ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয় বলে দাবি করেন কুণাল। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও প্ররোচনায় পা না দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement