বিধানসভা নির্বাচনে তিন জন বিধায়ক এবং ১০%-এর উপরে ভোট পেয়েছে বিজেপি। এই সাফল্যকে পুঁজি করে ২০১৯-এর লোকসভা এবং তার দু’বছর পরের বিধানসভায় আরও এগোতে চায় তারা।
মোদী সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশ জুড়ে তাদের কৃতিত্ব প্রচারে নেমেছে বিজেপি। কলকাতায় সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) বৃহস্পতিবার সেই উপলক্ষেই একটি অনুষ্ঠানে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এবং রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সকলেই এ রাজ্য নিয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের উপরে জোর দিয়েছেন। রামের বক্তব্য, অসমে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হবে। দল সেই কথা রেখেছে। ভোটে জেতার পরেই বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। এর পরেই রাম বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতায় এলে আমরা অনুপ্রবেশ বন্ধ করব। আপনারা (দলীয় কর্মীরা) অসমের পথে চলুন। এখানে আপনারাও তখন প্রয়োজনীয় সংখ্যা পেয়ে যাবেন।’’
রামের বক্তব্য, ভোটে এ বার বাংলার মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেরলে বামেদের সঙ্গে লড়াই আর এ রাজ্যে তাদের সঙ্গে জোট— কংগ্রেসের এই দ্বিচারিতা মানুষ মানতে পারেনি। এই সূত্রেই তৃণমূলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যের শাসকেরা যদি কংগ্রেসি সংস্কৃতিই চালায়, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের তৃণমূল-মুক্ত দেশ গড়ার ডাকও দিতে হবে। আমরা হিংসার পথ নেব না। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। পরিবর্তনের জন্য যেখানে যেটা করা উচিত, সেখানে সেটা করা হবে।’’
দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু ওই অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন, কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে কিছু গরম গরম কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চেয়েছিলাম, শুধু কর্মীরা মার খাবেন কেন? নেতাদের কারও গায়েও হাত পড়ুক। তাতে জল গরম হবে! মাননীয় রূপাদি আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর জন্য আমরা রাস্তায় নামতে পেরেছি।’’ এখন এ রাজ্যে বিজেপি-র দু’জন সাংসদ আছেন লোকসভায়। আগামী ২০১৯-এর ভোটে ওই সংখ্যাটা ২০-তে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মীদের কাছে আহ্বান করেছেন দিলীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের এমন ফল করতে হবে, যাতে রাজ্যসভায় বিল পাশ করাতে অন্যদের মুখাপেক্ষী হতে না হয়।’’ আর মন্ত্রী সুরেশের পরামর্শ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য ঘরে ঘরে গিয়ে কর্মীদের প্রচার করতে হবে। তা হলেই রাজ্যের মানুষ বিজেপি-কে বিপুল ভোটে জেতাবেন।’’
কিন্তু সুরেশ এ দিনই কলকাতার অন্যত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন। মমতাকে সঙ্গে নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রেস ক্লাবে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘বিজেপি পৃথিবীর বৃহত্তম দল। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়েও বেশি আমাদের সদস্য সংখ্যা। শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, দেশ গঠনের জন্য বিজেপি-র পাশে কেউ আসতে চাইলে তাঁকে স্বাগত।’’ এই প্রেক্ষিতেই বিজেপি-র একাংশের প্রশ্ন, মমতার জন্য দরজা খুলে রেখে আবার তাঁরই বিরুদ্ধে লড়ে সরকার দখলের স্বপ্ন কত দূর বাস্তবসম্মত?