BJP

BJP: ফের বিদ্রোহ, ইস্তফার  হিড়িক, শৃঙ্খলার পাঠ  শোনাচ্ছে বিজেপি

মুর্শিদাবাদে বিজেপির দুই বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ এবং সুব্রত মৈত্র এ দিন দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২ ০৭:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

জোড়া উপনির্বাচনে দল ফের বিপর্যয়ের মুখে পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগঠনের পদ থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করলেন বিজেপির অন্তত ১৩ জন নেতা। তাঁদের মধ্যে দু’জন মুর্শিদাবাদ জেলার বিজেপি বিধায়ক। তাঁদের পাশাপাশি ১০ জন নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আসানসোলের আর এক নেতা রবিবারই তোপ দেগেছেন, লোকসভা উপনির্বাচনের প্রচার চলাকালীন তাঁর উপরে হামলা হলেও দলের ‘ব্যস্ত নেতারা’ পাশে দাঁড়ানোর সময় পাননি! কেন একসঙ্গে এত নেতা বিদ্রোহ করছেন, তা দলীয় নেতৃত্বের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করে আগুনে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতা অনুপম হাজরা। এমন অসন্তোষের মুখে পড়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, দলের শৃঙ্খলা সব চেয়ে আগে। অসুবিধা থাকলে দলের অভ্যন্তরেই আলোচনার সুযোগ আছে। কিন্তু অভিযোগের ‘বাস্তবতা’ না থাকলে অন্য রকম সংশয় দেখা দেয়!

Advertisement

মুর্শিদাবাদে বিজেপির দুই বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ এবং সুব্রত মৈত্র এ দিন দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দলের সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন গৌরীশঙ্কর। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জেলা বিজেপির আরও দুই নেতা বাণী গঙ্গোপাধ্যায় ও দীপঙ্কর চৌধুরী। বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত দলের জেলা ও রাজ্য কমিটির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা না দিলেও ওই তিন জনকে সমর্থন জানিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিজেপির সাংগঠনিক জেলার বর্তমান সভাপতি ‘অযোগ্য ও অদক্ষ, তৃণমূলের দলদাস’দের মণ্ডল সভাপতি পদে বসিয়েছেন। পুর নির্বাচনেও তিনি নিজের পছন্দের লোকজনকে প্রার্থী করেছিলেন, যার জেরে দলের ভরাডুবি হয়েছে। বিষয়টি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) মন্ত্রী অমিতাভ চক্রবর্তী ও রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই তাঁরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা ব্লকে ব্লকে বিজেপিতে থেকেই সমান্তরাল কমিটি গড়ে সংগঠন করার কথাও ঘোষণা করেছেন!

নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও ‘একনায়কের মতো’ দল চালাচ্ছেন বলে বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ। পুরভোটে নিজের পছন্দের লোকজনকে প্রার্থী করার ফল ভুগতে হয়েছে বলে মুর্শিদাবাদের চার জনের মতো নদিয়া উত্তরের ১০ নেতারও একই সুর। নেতৃত্বের ‘অপদার্থতা ও অযোগ্যতা’র জন্য দলের বিপর্যয় হয়েই চলেছে বলে শনিবার উপনির্বাচনের ফলের পরেই তোপ দেগেছিলেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। কেন এমন পরিস্থিতি হল, কেন গৌরীশঙ্করের মতো ‘আদি’ বিজেপি নেতাদের পদ ছাড়ার কথা বলতে হচ্ছে, দলীয় নেতৃত্বের তা গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা উচিত বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন সাংসদ অনুপম।

Advertisement

বিদ্রোহের মুখে পড়ে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যা বলতেন, এখন তা-ই বলছেন বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্তও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মতান্তর হতেই পারে। অসুবিধা থাকলে আমাদের দলে তা জানানোর অনেক সুযোগ আছে। দলের যে রীতি, নিয়ম সেটা মেনেই সকলকে চলতে হবে। দলের শৃঙ্খলা সবার আগে। কারও কোনও সমস্যা থাকলে রাজ্য নেতৃত্বকে বলতে পারেন, পর্যবেক্ষককে জানাতে পারেন। তাতে খুশি না হলে কেন্দ্রীয় দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন), এমনকি, সর্বভারতীয় সভাপতিকেও জানাতে পারেন। যদি কেউ প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করতে চান, যদি অভিযোগের বাস্তবতা না থাকে, তখন অন্য সংশয় তৈরি হয়।’’ রাজ্য সভাপতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নানা অভিযোগ তুলে বিতর্ক তৈরি করে দল ছাড়া বা বদলের প্রবণতা আগেও দেখা গিয়েছে। যদিও গৌরীশঙ্করদের পাল্টা অভিযোগ, রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ব্যস্ততার কথা বলে তাঁদের বক্তব্য শুনছেন না, রাজ্য সভাপতির সাড়াও মিলছে না।

বিজেপি ছেড়ে এসে অধুনা তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘মণ্ডল চালাতে জানে না, এমন লোককে রাজ্যে দল চালাতে দিলে এই রকমই হবে! নিজেদের দলে বিদ্রোহের সুর শোনা গেলে যে নেতারা শৃঙ্খলার পাঠ দেন, তাঁরাই আবার অন্য দলে কোথাও বেসুর শুনলেই তার ফায়দা নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন!’’ বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, কোনও ঘটনা বা বিষয়ে ভিন্নমত হওয়া আর সাংগঠনিক বিষয় এক জিনিস নয়। দল পরিচালনা নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকলে তা দলের ভিতরেই বলা উচিত। বিজেপির এক রাজ্য নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘দলের অভ্যন্তরের ক্ষোভ বাইরে আনায় তপন শিকদারকেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। বিজেপি চিরকালই শৃঙ্খলাবদ্ধ দল ছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন দেখা যাচ্ছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement