তৃণমূল নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয় এবং সেখানে অনেক শিল্পপতি প্রচুর বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন। এ বছরেও এপ্রিল মাসে ওই সম্মেলন হওয়ার কথা।
সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ টানতে রাজ্য সরকারকে সাহায্য করার জন্য বিজেপি প্রস্তুত বলে জানালেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বুধবার বলেন, ‘‘আমরা গঠনমূলক বিরোধিতায় বিশ্বাস করি। রাজ্য সরকার মনে করলে আমরা বিজেপি শাসিত রাজ্যে গিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে দেখাও করতে পারি, যাতে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে আসেন।’’ একই সঙ্গে সুকান্তের আক্ষেপ, ‘‘তবে মুখ্যমন্ত্রীর সেই ধরনের কোনও চিন্তাভাবনা নেই, এটাই দুর্ভাগ্যের।’’
বিশেষজ্ঞ মহলের বরাবরের বক্তব্য, রাজ্যে শিল্পায়নের স্বার্থে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে শাসক ও বিরোধীর একসঙ্গে উদ্যোগী হওয়া উচিত। এই প্রেক্ষিতেই সুকান্তের রাজ্যের শিল্পায়নে সহযোগিতা করতে চাওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
যদিও সুকান্ত বা বিজেপির তরফে কেউই এখনও পর্যন্ত ওই প্রস্তাব জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সকারকে চিঠি লেখেননি। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়া সম্মেলনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে রাজ্যে শিল্পায়নের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছিলেন। সেখানে রাজ্যপাল কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখালেও রাজভবনে ফিরেই তিনি টুইটে রাজ্যকে শিল্পায়ন নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন। সুকান্তের এ দিনের প্রস্তাব শুনে রাজ্যপালের সেই আচরণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের অনেকেই। ওই ঘটনার সূত্র ধরে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, সুকান্ত নিজের ওই প্রস্তাবে আন্তরিক কি?
তৃণমূল নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয় এবং সেখানে অনেক শিল্পপতি প্রচুর বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন। এ বছরেও এপ্রিল মাসে ওই সম্মেলন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই আদানি গোষ্ঠী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছে। বাঙ্গুর গোষ্ঠীরও তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা। নবান্নের দাবি, দেশের বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী এবং শিল্পপতি এপ্রিলে ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন। বিদেশ থেকেও অনেক শিল্পপতি সেখানে যোগ দেবেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। রাজ্যে কত বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে এবং তার মধ্যে কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়েও তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার প্রায়ই তথ্য দেয়। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ওই সব তথ্য বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু শাসক শিবির কখনওই ওই অভিযোগ স্বীকার করে না।
সুকান্তের এ দিনের প্রস্তাবের পরে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপি যদি সত্যিই দলগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নে উদ্যোগী হতে চায়, তা হলে তাদের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ঢালাও বেসরকারিকরণের নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে শিল্পায়ন হয় না। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, ‘‘কেন্দ্র আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল, সেইলের বিভিন্ন অংশ বিক্রি করে দিতে চাইছে। পোর্ট ট্রাস্টকে তুলে দিয়ে আইন বদলে পোর্ট অথরিটি করা হয়েছে। তাদের ঢালাও বেসরকারিকরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিজেপি আগে এই সর্বনাশের মহোৎসবটা বন্ধ করুক। তার পরে তাদের প্রস্তাব নিয়ে
ভাবা যাবে।’’