কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে লালবাতি গাড়ি চড়ে ঘুরে বে়ড়ানোর জন্য কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নূর-উর রহমান বরকতিকে গ্রেফতার করার দাবি তুলল রাজ্য বিজেপি। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ বরকতিকে গ্রেফতার করতে না পারলে তাঁরাই ওই সংখ্যালঘু নেতাকে তুলে লালবাজারে দিয়ে আসবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক সায়ন্তন বসু। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় একসঙ্গে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে চড়ে বুধবার রায়গঞ্জে ভোটের প্রচার করেছেন। হেলমেট ছাড়া বাইকে চড়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে তুলে লকেট এ দিন পাল্টা বলেন, ‘‘বরকতির গাড়ি থেকে লালবাতি খোলা হোক, আমরাও হেলমেট পরে বাইকে চড়ব।’’ লকেটের এই মন্তব্য অবশ্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, হেলমেট পরে বাইকে চড়া বাধ্যতামূলক সওয়ারিরই দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য। সেই নিয়ম ভেঙে লকেটরা কী বার্তা দিচ্ছেন? তা ছাড়া, একটা অন্যায়ের জবাবে কি আর একটা অন্যায় করা যায়?
কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে দেশজোড়া ভিআইপি-রা গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেললেও কলকাতার ইমাম বরকতি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি লালবাতি লাগানো গাড়িতেই ঘুরবেন। কারণ, এ রাজ্যে কেন্দ্রের আইন চলে না। এখানে রাজ্যের আইন চলে। ব্রিটিশ রাজ থেকে তাঁদের গাড়িতে লালবাতি আছে। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ার কথা জানেন। কিন্তু তিনি আপত্তি করেননি। রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা ওই বক্তব্যের ভিডিও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের দফতরে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে পাঠিয়েছেন। প্রতাপবাবু বলেন, ‘‘বরকতি ইঙ্গিত করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বাইরে। এর জন্য তাঁকে গ্রেফতার করতেই হবে।’’
দলীয় কর্মীদের উপর তৃণমূল সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক’ আক্রমণ, তাঁদের ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে আগামী ২৫ মে লালবাজার অভিযান করবে বিজেপি। কিন্তু বরকতির ওই মন্তব্যের পর তাঁকে গ্রেফতার করাই ওই কর্মসূচির মুখ্য দাবি হিসাবে রাখছেন দলীয় নেতৃত্ব।
বুদ্ধজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এ দিন মমতা বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন। তার জবাবে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেছেন, ‘‘মমতাদিদি বিজেপি-কে জ্ঞান না দিয়ে বরকতির মতো মহাপুরুষকে দিন। তাতে পশ্চিমবঙ্গের ভাল হবে।’’ বিরোধী কংগ্রেস এবং বামও বরকতির ওই আচরণের বিরোধিতা করেছে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বরকতি সম্পর্কে কথা বলতেই আমার রুচিতে বাধে।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ইমাম সাহেবদের কাজ ধর্মপ্রচার করা। ইমাম যদি রাজনীতি এবং ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে ওঠেন এবং তাঁর মাথায় লাল বাতি ঘুরতে থাকে, তা হলে রাজ্যের বিপদ। মমতার তৈরি ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনরাই তাঁর চারপাশে আছেন।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব বরকতির আচরণ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।