বেলঘরিয়ায় সায়ন ঘোষের বাড়িতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ও দলের অন্য নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশে ধৃত সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে এ রাজ্যে আরও সুর চড়া করল বিজেপি। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ‘গোটা বিশ্বের হিন্দুদের’ এক হওয়ার ডাক দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির বিরুদ্ধে শুধুই মেরুকরণের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে আক্রান্ত বেলঘরিয়ার যুবক সায়ন ঘোষের বাড়িতে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর যে প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস ও সিপিএম।
বিধানসভার বাইরে মঙ্গলবার একটি ছবি দেখিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দাবি, ‘‘চিন্ময়কৃষ্ণের প্রধান আইনজীবী রমেন রায়কে মৌলবাদীরা এমন অবস্থা করেছে যে, তিনি আইসিইউ-এ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ছাড়াও, এ দিন আদালতে যে তরুণ আইনজীবীর দাঁড়ানোর কথা ছিল, তাঁর মাথা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করব, তারা যেন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করে। সেই সঙ্গে ‘ইস্কনে’র বিশ্বব্যাপী যত শাখা আছে, তারা যেন কড়া প্রতিক্রিয়া দেয়।’’ বিরোধী দলনেতা এ দিন গোটা বিশ্বের হিন্দুদের একত্রিত হওয়ার কথাও বলেছেন। বাংলাদেশে চিন্ময়কৃষ্ণের পক্ষে কোনও আইনজীবী না দাঁড়ানোর ঘটনা মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘যে কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলার কথা, সেখানে না-বলে এখানে হুঙ্কার দিচ্ছেন কেন?’’
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সায়ন সে দেশে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পরে সেখানকার পুলিশ-প্রশাসন কোনও সহযোগিতা করেনি এবং ফিরে এসে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই-কমিশনে অভিযোগ জানাতে গেলেও সরকারি ভাবে তা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। বেলঘরিয়ায় তাঁদের বাড়িতে এ দিন গিয়েছিলেন শুভঙ্কর, কৃষ্ণা দেবনাথ, শামিম আখতার-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সায়ন তাঁদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তাঁর এক মুসলিম বন্ধুই আশ্রয় দিয়েছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের তরফে কেউ এক বারও এসে তাঁর খোঁজ নেননি। সমস্যার প্রকৃত সমাধানের পথ না-খুঁজে এখানে বিজেপির নেতারা সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে গিয়ে এই রাজ্যের বুকেও মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করছেন।’’ বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ব্যর্থতা’র প্রতিবাদে এ দিন টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন প্রদীপ প্রসাদ, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্ররাজ চট্টোপাধ্যায়েরা। যাদবপুরে বাংলাদেশ-প্রশ্নে সিপিএমের মিছিলে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।
মুখ্যমন্ত্রী শান্তিরক্ষা বাহিনীর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা আমাদের দেশের গৃহীত বিদেশনীতির পরিপন্থী। আমরা সব সময়েই প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতেই মেটাতে চাই। এখন দিল্লির শাসক দল ও মমতা বাংলাদেশের ঘটনাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে চাইছেন। কোনও স্বাধীন দেশ, স্বাধীনচেতা মানুষের ভাবনার বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব।’’ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীরও মত, ‘‘বিবদমান পক্ষ রাজি হলে বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী যায়। বাংলাদেশে কিন্তু সশস্ত্র সংঘর্ষ হচ্ছে না। সে দেশে অস্থিরতা এবং ইউনূস সরকারের দুর্বলতার সুযোগে মৌলবাদী কিছু শক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কাউকে চটাতে চাইছেন না, মাঝখানে দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলছেন!’’