Sukanta Majumdar

সুকান্ত তখনও পথে, দিলীপ ঘোষণা করে দিলেন ‘নবান্ন অভিযান শেষ’, প্রকাশ্যে এল বিজেপির অন্দরের কৌশল

দিলীপের ঘোষণা শোনার পরে সুকান্ত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আলাদা আলাদা মিছিল। আলাদা আলাদা আন্দোলন। দিলীপ ঘোষ নিজের মিছিল শেষ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু আমার মিছিল শেষ নয়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:১২
Share:

গ্রেফতারির পর সুকান্ত মজুমদার। ডান দিকে, লালবাজারে অভিযান শেষের ঘোষণার পর দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

দুপুর তখন ২টো ৪০। সাঁতরাগাছিতে গোলমাল চলছে। দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। ও দিকে হাওড়া ময়দান থেকে মিছিল নিয়ে এগোতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন রাজ্য় সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে নিয়ে বসে পড়েছেন রাস্তায়। লালবাজারে আটক শুভেন্দু অধিকারী, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের মুক্ত করতে ঘোষণা ছাড়াই বিজেপির চতুর্থ মিছিল। এমন সময়ে মিছিল নিয়ে হাওড়া ব্রিজের কাছে বাধা পেয়ে দিলীপ ঘোষ ঘোষণা করে দেন, ‘‘নবান্ন অভিযান শেষ।’’

Advertisement

সুকান্ত দিলীপের ঘোষণা শোনার পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আলাদা আলাদা মিছিল। আলাদা আলাদা আন্দোলন। দিলীপ ঘোষ নিজের মিছিল শেষ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু আমার মিছিল শেষ নয়। নবান্ন অভিযান কর্মসূচি চলছে। পুলিশ যতক্ষণ না আমায় গ্রেফতার করে ততক্ষণ রাস্তাতেই বসে থাকব।’’ এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ৩টে ২০ নাগাদ সুকান্তকে আটক করে পুলিশ।

আপাতদৃষ্টিতে এটি দিলীপ-সুকান্তের মতান্তর বলে মনে হলেও বিজেপির একাংশ একে ‘কৌশল’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন। তাঁদের মতে, এই ভাবে তিনটি আলাদা আলাদা পথে আন্দোলন করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নেওয়া হয়েছিল। যাতে দিলীপের ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলন শেষ বলে মনে হলেও তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এমনকি, পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে! অর্থাৎ, আন্দোলন তখনও শেষ হয়নি। এটিই ‘কৌশল’।

Advertisement

বস্তুত, দিলীপ সম্পর্কে বিজেপি নেতৃত্বের মনোভাব হল, দিলীপ তাঁর নিজের মতো করে যা বলার বলবেন। যেহেতু তিনি সংবাদমাধ্যমের ‘পছন্দের’, তাই তাঁর সরকার-বিরোধী বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বও পাবে। দল তাঁকে সে ভাবেই ছেড়ে রেখেছে। ফলে মঙ্গলবার তিনি যা যা বলেছেন, তাকে দলীয় লাইনের পরিপন্থী বা সুকান্তের সঙ্গে মতান্তর বলে নেতৃত্ব মনে করছেন না।

বিজেপির অন্দরে এমন ঘটনা অবশ্য আগেও ঘটেছে। তার মধ্যে বিজেপির প্রাক্তন এবং বর্তমান রাজ্য সভাপতির মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে অনেকবার। সাম্প্রতিক কালে ইডি-সিবিআই নিয়ে দিলীপের মন্তব্য তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সম্প্রতি বাংলার বিজেপির তিন বড় নেতা একসঙ্গেই নবান্ন অভিযানের ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সকালে সাঁতরাগাছি থেকে শুভেন্দুর মিছিল, কলেজ স্ট্রিটে দিলীপের এবং হাওড়া থেকে সুকান্ত মিছিলের প্রস্তুতিও শুরু হয়। আপাতত ভাবে তিনটি মিছিলের লক্ষ্য এক হলেও শেষ পর্যন্ত সুকান্তকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তিনটি আলাদা আলাদা আন্দোলন হচ্ছিল।’’

মঙ্গলবার সকালে অবশ্য শুভেন্দুকে তাঁর মিছিলের জন্য সাঁতরাগাছিতে পৌঁছনোর আগেই আটকে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। শুভেন্দু অবশ্য বিশেষ বাধা দেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘কী করবেন গ্রেফতার করবেন, তবে করুন।’’ এর পর নিজেই উঠে যান প্রিজন ভ্যানে। অন্য দিকে দিলীপের মিছিলও আটকে দেওয়া হয় লালবাজারের কাছে। হাওড়া স্টেশন থেকে হাওড়া ময়দানে গিয়ে সেখান থেকে নবান্নের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করা সুকান্ত এবং অগ্নিমিত্রা পালকেও আটকে দেওয়া হয় হাওড়াতেই। তিনটি মিছিলে আক্রোমণোদ্যত বিজেপি সমর্থকদের উপর জলকামান-কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করা হয়। ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় মিছিল। এর পরই সুকান্ত হাওড়া ময়দানে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন।

হাওড়া ময়দানের কাছেই রাস্তায় বসে পড়ে জানিয়ে দেন, যেই আন্দোলন শেষ করুক তাঁর আন্দোলন চলছে। তাঁকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তিনি আন্দোলন চালিয়েই যাবেন। এর পরেই অবশ্য গ্রেফতার করে শিবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় সুকান্তকে। উল্লেখ্য, সুকান্তের নবান্ন-মিছিল শুরুতেই আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে আসতে শুরু করেন। কিন্তু তার পরই ছিল পুলিশের গার্ড ওয়াল। বিজেপি কর্মীরা সেই বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করলে জল কামান ছোঁড়া হয় সুকান্তের নেতৃত্বাধীন মিছিলে। লাঠিও চালানো হয়। এক বিজেপির কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথা ফাটে আরেক জনের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement