বিষ্ণুপুর থানা বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ হেফাজতে থাকা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বুধবার দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বিষ্ণুপুর থানায় হাজির হন সৌমিত্র। প্রায় ২০ মিনিট তিনি থানায় ছিলেন। কথা বলেন শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গেও। বিষয়টিকে নেহাতই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে সৌমিত্র দাবি করলেও, এ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ-সৌমিত্রর এই সাক্ষাৎকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূলও।
তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোক মুখোপাধ্যায় এই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ প্রসঙ্গে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব খাটাতেই থানায় গিয়েছিলেন সাংসদ। বিজেপি আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা। ইতিমধ্যেই শ্যামাপ্রসাদ দুর্নীতিতে জড়িত কয়েক জনের নাম পুলিশের কাছে বলেছেন বলে শুনেছি। তাঁদের নাম যাতে জড়িয়ে না যায় সে জন্যই থানায় গিয়েছিলেন সাংসদ। যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আইন তাঁদের সাজা দেবে।”
সৌমিত্রর দাবি, শ্যমাপ্রসাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। পরে তিনি বলেন, “আমি শ্যামাপ্রসাদবাবুর নেতৃত্বে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করেছি। ২০১১ সালে তাঁর সহযোগিতায় বিধায়ক হয়েছিলাম। ব্যক্তিগত ভাবে শ্যামাপ্রসাদবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” সৌমিত্র আরও বলেন, “শুনলাম শ্যামাপ্রসাদবাবুকে রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে বা হয়নি তা আমি বলতে পারব না। তবে তাঁর বয়স ও শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আইনি নোটিস পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত করলে ভাল হত।” তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক জন বয়স্ক মানুষকে রাজ্য সরকার ও প্রশাসন যে ভাবে নির্যাতন করছে, তা মেনে নেওয়া যায়না।’’
শ্যামাপ্রসাদ যদি ব্যক্তিগত ভাবে কোনও সহযোগিতা চান, তাঁর পাশে থাকবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ। তাঁর কথায়, “বাঁকুড়া জেলায় যাঁরা তৃণমূল করছে তাঁরা সকলেই শ্যামাপ্রসাদবাবুর হাতে তৈরি। তাঁরা বেইমানি করতে পারেন, আমি তা পারব না। কারণ আমি বেইমান নই।”
২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রী পদে ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। ২০২০-র শেষে যোগ দেন বিজেপি-তে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছিলেন, শ্যামাপ্রসাদ বিজেপি-তে যোগ দিলেও বর্তমানে তাঁর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য দিকে, বিজেপি-তে শ্যামাপ্রসাদের যোগদানের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, তিনি বিজেপি-তেই আছেন, তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। গ্রেফতারের পর শ্যামাপ্রসাদ নিজেও তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি। দু’দলই যখন তাঁকে নিয়ে দায় এড়াচ্ছে, এই অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে থাকা প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে সৌমিত্রের সাক্ষাৎ নতুন করে রাজনৈতিক জল্পনা উস্কে দিয়েছে।
অন্য দিকে, পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে মঙ্গলবার রাতে দিলীপ গড়াই নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। দিলীপ বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশিয়ার বলে জানা গিয়েছে।