অশোক লাহিড়ী। — ফাইল ছবি
রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য ছ’টি দাবি তুললেন বিজেপি বিধায়ক তথা অর্থনীতির পণ্ডিত অশোক লাহিড়ী। তিনি বুধবার কলকাতায় অভিযোগ করেন, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র বালুরঘাটের ২৩০ জন মানুষ রাজ্য সরকারের নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা পাননি। সেই প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘোষিত প্রকল্পগুলির যথাযথ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে আমি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করি। তাই দাবি করছি— রাজ্য সরকারের এ রকম সব ক’টি প্রকল্পের নাম, সেগুলির সুবিধা পাওয়ার শর্ত, প্রকল্পগুলির সুবিধাভোগী কারা, যাঁরা সুবিধা এখনও পাননি, তাঁরা কবে পাবেন এবং যাঁরা পাবেন না, তাঁরা কেন পাবেন না— এই পাঁচটি তথ্য প্রকাশ করা হোক। আর সিএজি রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করা হোক। তা হলেই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।”
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, প্রতি বছর বাজেটের সঙ্গে ২৫টি পুস্তিকা দেওয়া হয়। সেগুলিতে প্রতিটি দফতর ধরে কোথায় কত অর্থ বরাদ্দ এবং ব্যয় হচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ থাকে। অশোকবাবু অর্থনীতির লোক। তিনি চাইলে ১০ বছরের আড়াইশোটি পুস্তিকা দেখে নিতে পারেন।
অশোকের আরও বক্তব্য, রাজ্যে ২৯টি কেন্দ্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্প আছে। কিন্তু সেগুলির কোনটাতে কেন্দ্র এবং রাজ্য কী কী অনুপাতে টাকা দিচ্ছে, তা জানানো হয় না। রাজ্যের ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে কোথা থেকে টাকা আসছে, তা-ও জানা যায়নি। এমনকি, এ সব বিষয়ে বিধানসভাতেও আলোচনার সুযোগ নেই।
জবাবে তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, “একটা আনুমানিক হিসাবে রাজ্যের বাজেট ৩ লক্ষ কোটি টাকার। তার মধ্যে এই বছর বিভিন্ন খাতে পরিকল্পিত ব্যয় বরাদ্দ ৯০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ওই প্রকল্পগুলিও ধরা আছে। এ রকম ভাবে ১০ বছরের হিসাব মজুত আছে। একটু কষ্ট করে দেখে নিলে সব হিসাব পেয়ে যাবেন।”
আর অশোকের স্বচ্ছতা সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকে বলা হয়েছে, রাজ্যের কোষাগারে এখন নগদে বা চেকে কোনও লেনদেন হয় না। সবটাই হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে এবং তা সরাসরি চলে যায় উপভোক্তার কাছে। ফলে
এর মধ্যে কোনও মারপ্যাঁচ বা কারচুপির সুযোগ নেই। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “অশোকবাবু অর্থনীতির পণ্ডিত। দলের চশমা দিয়ে না দেখলে তাঁর এই স্বচ্ছতার প্রশংসা করা উচিত। সেটা তিনি মনে মনে করলেও হয়তো দলের চাপে মুখে বলতে পারছেন না।”
বালুরঘাটের ২৩০ জন বাসিন্দার রাজ্য সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হওয়ার যে অভিযোগ অশোক তুলেছেন, তা নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, এই বিষয়ে তথ্য জেলাশাসকের কাছে থাকার কথা। নির্দিষ্ট তথ্য নির্দিষ্ট জায়গায় জানালে জেলা স্তর থেকেই উত্তর পাওয়া যায়।