ভোট ২০২৪ সালে। লক্ষ্য ২০২৫ সালও। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। অন্যান্য বিরোধী দলও জোট বাঁধছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে বাংলার বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সোমবার বৈঠকে বসতে চলেছেন আরএসএস কর্তারা। সংসদে অধিবেশন চলছে। তার জন্য রবিবারই দিল্লি চলে যাবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সোমবার সকালের মধ্যে চলে যাওয়ার কথা বিরেধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সাংগঠনিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। কোথায় কখন এই বৈঠক শুরু হবে, সে ব্যাপারে রাজ্যের বিজেপি বা আরএসএস নেতারা মুখ খুলতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, এটা একেবারেই রুটিন এবং অভ্যন্তরীণ বৈঠক। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এমন আলোচনাও হচ্ছে যে ২০২৪ সালের নির্বাচন একমাত্র লক্ষ্য হলেও তার সঙ্গে মিশে রয়েছে ২০২৫ সালও। প্রসঙ্গত ১৯২৫ সালে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের বিজয়া দশমী তিথি থেকেই শুরু হয়ে যাবে সঙ্ঘের শতবর্ষ পালন। সঙ্ঘ পরিবার খুব ঘটা করে শতবর্ষ পালন করবে কি না জানা না গেলেও এটা ঠিক যে, গেরুয়া শিবিরের কর্তারা চান সেই সময়ে বড় শক্তি নিয়ে দেশের ক্ষমতায় থাকুক বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে থাকুন সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রচারক নরেন্দ্র মোদী। সেই কারণে, আগামী লোকসভা নির্বাচন শুধু বিজেপির কাছে নয়, গোটা সঙ্ঘ পরিবারের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরাসরি রাজনীতি না করলেও বিজেপিতে যে সঙ্ঘের প্রভাব কাজ করে, তা সকলেরই জানা। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদটি সঙ্ঘের প্রচারকদের জন্যই নির্দিষ্ট থাকে। সেটা যেমন রাজ্যে রাজ্যে, তেমনই কেন্দ্রীয় স্তরেও। ফলে সোমবারের বৈঠকে হাজির থাকার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের। থাকবেন সর্বভারতীয় বিজেপির অন্যান্য শীর্ষনেতারাও। রাজ্য বিজেপির তিন প্রধানকে বৈঠকে ডাকা হলেও অন্য রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকবে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি।
আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের বৈঠক নিয়মিতই হয়ে থাকে। সংগঠনের ভাষায় এটিকে ‘সমন্বয় বৈঠক’ বলা হয়। আগে গোটা দেশের জন্য একটিই বৈঠক হত। সেখানেই সব রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠনের প্রধানেরা যোগ দিতেন। এখন সংগঠন বড় হয়ে যাওয়ায় প্রতিটি রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা বৈঠক হয়। অনেক সময়ে এক দিনে একাধিক রাজ্যের নেতাদেরও ডাকা হয়। সোমবারের বৈঠকে অন্য কোনও রাজ্যের নেতাদের ডাকা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
কী হয় এই বৈঠকে? বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার নির্বাচনের আগে আগে বৈঠক হওয়ায় এত আলোচনা হলেও এমনটা প্রায়শই হয়ে থাকে। বছরে একাধিকবারও হয়। রাজ্য এবং জেলা স্তরেও নিয়মিত এমন বৈঠক হয়ে থাকে। মূল উদ্দেশ্য, সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধন। একই সময়ে যাতে একাধিক সংগঠন বড় কর্মসূচি না নেয়, তা ঠিক করা। তবে এর থেকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিজেপিকে বাইরে রাখা হয়। এর পাশাপাশি একটি সংগঠনের কর্মসূচি সফল করতে বাকিরা কতটা এবং কী ভাবে সহযোগিতা করবে, তা-ও ঠিক হয় ‘সমন্বয়’ বৈঠকে।
আরএসএস সরাসরি রাজনৈতিক বিষয়ে কথা না বললেও অন্য সংগঠন তৈরি করে বিজেপির হয়ে প্রচার করে থাকে। এই রাজ্যেও গত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে ‘জাগরণ মঞ্চ’ নাম দিয়ে প্রচার করেছিলেন সঙ্ঘের সদস্যেরা। সেই প্রচারে সরাসরি বিজেপিকে ভোট দিতে না বলা হলেও জাতীয়তাবাদী পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হয়। আগামী বছরে লোকসভা নির্বাচনের আগে আগেই অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মন্দির উন্মোচনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সময়ে বিজেপি ছাড়াও সঙ্ঘ পরিবারের সব সংগঠনই প্রচার কর্মসূচি নেবে। সোমবারের বৈঠকে সেই প্রচারের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি হতে পারে বলেও জল্পনা রয়েছে।