শুভেন্দুর অভিযোগের জবাব দিতে শীর্ষ নেতৃত্বকেই অনুরোধ করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।
ময়নায় জনসভা করে নাম ধরে ধরে ‘চাকরি চোর’ বলে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্-মুহূর্তে নন্দীগ্রাম বিধায়কের এমন অভিযোগে ‘চাপে’ পড়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই এই বিষয়ে জবাব দিতে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছে তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল। সূত্রের খবর, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। শনিবার ময়না বিধানসভা এলাকার বাকচায় এক জনসভা করেন বিরোধী দলনেতা। সেখানেই তিনি ময়না বিধানসভা এলাকার ১১ জন তৃণমূল নেতার নাম করেছেন। সেই ১১ জন নেতাকে তিনি অভিযুক্ত করেছেন নিয়োগ দুর্নীতিতে। সঙ্গে দাবি করেছেন, এই সব নেতা ইডির হাতে ধৃত জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লিঙ্ক ম্যান হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কাজ করতেন। তাঁর আরও অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের সঙ্গেও তাঁদের যোগাযোগ ছিল। পার্থ ও অয়নের সঙ্গে যোগসাজশ করেই তাঁরা নিয়োগ দুর্নীতি করেছেন। বিরোধী দলনেতা এ ভাবে প্রকাশ্যে দুর্নীতির অভিযোগে এনে সরব হওয়ায় কিছুটা ‘চাপ’ বেড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উপর।
তাই কী ভাবে এই সমস্ত অভিযোগের জবাব দেওয়া হবে, তা ঠিক করে দিতে শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্বের মুখাপেক্ষী তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা তাঁর রুচির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তো নিজেকে বড় নেতা মনে করেন। তাই কোনটা তাঁর বলা উচিত, আর কোনটা নয়, তাই এখনও পর্যন্ত তিনি ঠিক করে উঠতে পারেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা আমাদের দলের যে সমস্ত নেতার নাম মঞ্চ থেকে বলেছেন, তা আমরা সবটাই জেনেছি। কিন্তু তাঁর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা ঠিক করবে শীর্ষ নেতৃত্ব। আমি বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তারা আমাদের যে নির্দেশ দেবেন, সে ভাবেই বিরোধী দলনেতার অভিযোগের জবাব দেওয়া হবে।’’ সূত্রের খবর, শুভেন্দুর অভিযোগের জবাব দিতে শীর্ষ নেতৃত্বকেই অনুরোধ করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
কারণ, গত সোমবার খেজুরির যে মাঠে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা করে বিজেপি নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় সরকার ও অধিকারী পরিবারকে আক্রমণ করেছিলেন, আগামী সোমবার সেই মাঠেই পাল্টা সভা করে জবাব দেবেন বিরোধী দলনেতা। তাই বিজেপি নেতৃত্বের এমন জবাব দেওয়ার কৌশলের পাল্টা শীর্ষ নেতৃত্বকে দিয়েই জবাব দিতে চায় তৃণমূলও। শাসকদলের এমন কৌশল প্রসঙ্গে ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু যা বলেছেন, প্রকাশ্য জনসভায় বলেছেন। কোনও রাখঢাক করে তো বলেননি। কারও যদি তাঁর বক্তৃতা নিয়ে কোনও আপত্তি থাকে, তা হলে রাজনৈতিক কৌশল না করে আদালতে যান। তবে গত ১২ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা বলতে পারি, এই সরকার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে মন্ত্রী স্তর পর্যন্ত, দুর্নীতি ছাড়া কিছুই করেনি। মন্ত্রীর ঘর থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি তল্লাশি করলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি মিলবে। সেগুলো কী ভাবে হয়েছে? আগে তৃণমূল সেই সব অভিযোগের জবাব দিক।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমরা তো জানি শুভেন্দুবাবু আরও অনেক এমন নাম এবং কেলেঙ্কারির কথা এখনও প্রকাশ করেননি। যা প্রকাশ করলে রাজ্যের মানুষ অবাক হয়ে যাবেন। তিনি সেগুলো যে দিন প্রকাশ করবেন, সে দিন তৃণমূল কী কৌশল নেবে?’’